বাপা ও একুশে পরিষদের গোলটেবিল
নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ২১:২১ পিএম
বরেন্দ্র অঞ্চল বিশেষ করে নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ক্রমেই বাড়ছে পানির সংকট। এতে কৃষি ও অর্থনীতিসহ সমস্ত প্রাণপ্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পানির অভাবে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এসব অঞ্চলে। নওগাঁয় অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে এসেছে। শনিবার (১৬ মার্চ) স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার হলরুমে নওগাঁ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির বর্তমান অবস্থা ও করণীয় শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাপা (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) ও একুশে পরিষদ নওগাঁ যৌথভাবে এই আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন একুশে পরিষদের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন ভূতত্ত্ববিদ ও নওগাঁ সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান, সাবেক অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম খান, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা মৌসুমীর নির্বাহী পরিচালক শহীদ হোসেন রানা, বাপা নওগাঁর সহসভাপতি মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সমাজসেবক ময়নুল হক, নদীরক্ষা কমিটির সদস্য নাইস পারভীন, একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গবেষক এমএম রাসেল, কৃষক প্রতিনিধি বিন আলী পিন্টু, সাংবাদিক শফিক ছোটন, এমআর রকি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শুষ্ক মৌসুমের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের জলাধারগুলো। নদীতেও প্রবাহ থাকছে না। ভূগর্ভে ক্রমেই নিচে নামছে পানির স্তর। এতে চরম সংকট তৈরি হচ্ছে। এ জন্য অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন, উজানে নদীর পানি প্রত্যাহার ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন তারা।
ভূতত্ত্ববিদ মিজানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বৃষ্টিপাত কমেছে। মাত্র দুই দশকে ভূগর্ভে পানির স্তর নিচে নেমেছে ৩০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোদাগাড়ি, নাচোল ও রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলা।
তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে মোট চাহিদার ৯০ শতাংশই ব্যবহার করা হয় কৃষিতে। এক কেজি ধান উৎপাদনে পানি লাগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার। এই চাপ কমানো না গেলে কয়েক দশকের মধ্যেই বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত অভিন্ন নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। নদীর প্রবাহ না থাকায় আমাদের দেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভের পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে তীব্র খরায় স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে এই অঞ্চলে। এতে ভূগর্ভের পানির ব্যবহার বেড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে ভূগর্ভে পানির স্তর আগের অবস্থায় ফিরছে না। তাই পানির অপচয় রোধ ও ভূগর্ভে চাপ কমাতে স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি নদী সংস্কার, ভূপৃষ্ঠে পানির উৎস্য বাড়ানোর জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষিতে সেচসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ক্রমাগত যে পরিমাণ ভূগর্ভের পানি ওঠানো হচ্ছে তার বিপরীতে ভূগর্ভে পানি রিচার্জ ঠিকমতো হচ্ছে না। এ কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই পানি ব্যবহারের দিকে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিকাজে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ চলে। এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যায়। প্রতিবছর যে পরিমাণ পানি নিচে নেমে যাচ্ছে তা আর পূরণ হচ্ছে না। তাই সামনে ভয়াবহ সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।