× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলাবদ্ধতা সংকট

নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন ভবদহ অঞ্চলের মানুষ

রফিকুল আলম, অভয়নগর (যশোর)

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৭ পিএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫২ পিএম

পানি অপসারণের একমাত্র পথ হরি নদী নাব্যতা হারানোয় যশোরের ভবদহ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। প্রবা ফটো

পানি অপসারণের একমাত্র পথ হরি নদী নাব্যতা হারানোয় যশোরের ভবদহ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। প্রবা ফটো

ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। পানিবন্দি থাকায় দীর্ঘ দুর্বিষহ থেকে উত্তরণে ভুক্তভোগীরা ভরসা করছেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুলের ওপর। কারণ তিনিও এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পানি নিষ্কাশন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সভা-সমাবেশে জয়ী হলে ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করার কথা বলেছেন।

এনামুল হক বাবুল যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকার অভয়নগর উপজেলার প্রায় অর্ধেক জনপদ ভবদহ জলাবদ্ধতায় দুর্গত। কৃষিজমি, মৎস্য উৎপাদন খামার, গবাদিপশু পালন ও যোগাযোগ্য ব্যবস্থা কয়েক দশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার তালা ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেশি সংকটাপন্ন এলাকা অভয়নগরের অংশ। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ভুল প্রকল্প গ্রহণের কারণে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সংসদ সদস্য বাবুল যদি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেন, তাহলে সবাই তাকে সহযোগিতা করবে। 

ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার শুরু গত শতকের আশির দশকে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোয়ারে নদী হয়ে আসা সাগরের লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে ভুল প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয় একের পর বাঁধ, কালভার্ট ও পোল্ডার। যে কারণে ভবদহ স্লুইস গেটের দক্ষিণে বিল-খাল, নদী-নালা ও জনপদ পলি জমে উঁচু হতে থাকে। বিপরীতে দক্ষিণে অভয়নগর-মনিরামপুর ও কেশবপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বেসিনে পরিণত হয়। দক্ষিণের ৫৬ বিলের পানি অপসারণের একমাত্র পথ হরি নদী নাব্যতা হারানোয় শুরু হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ভবদহ বেসিনের পানি বিল-খাল ছপিয়ে প্রবেশ করতে থাকে গ্রামের পর গ্রামে। সংকট সমাধানের দাবিতে গড়ে ওঠে বেশকিছু আন্দোলন। অন্যান্য সংগঠন ও সর্বস্তরের ভুক্তভোগী জনতাকে নিয়ে দীর্ঘদিন সক্রিয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল। 

তার নেতৃত্বে নদী-খালে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং জলাবদ্ধতা দূর করতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে কয়েকবার। দুর্গত অঞ্চলে দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরে তা লাঘবে ভুক্তভোগীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তিনি।

ভবদহ স্লুইস গেটের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হরি নদী। সেই নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন মরা খাল। ভাটার সময় নৌকাও আটকে যায়। প্রশস্ত বুকের নদী ৩০ থেকে ৫০ ফুটে ঠেকেছে। বাঁশের সাকো দিয়ে নদী পার হচ্ছে মানুষ। এলাকাবাসী জানায়, এভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক বছরের মধ্যে নদী মরে পানি নিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ফলে এই এলাকা স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। 

সুন্দলী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অমর বিশ্বাস বলেন, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনগণকে নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। তিনি এখন সংসদ সদস্য। আমাদের আশা, এবার ভবদহ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, ভবদহে পানি নিষ্কাশনের নামে পাওয়ার পাম্প কোনো কাজে আসেনি। শুধু বিদ্যুতের অপচয় হয়েছে। নির্ধারিত বিলে দরকার পরিকল্পিত টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালু। 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, ভবদহ এলাকার মানুষ আন্দোলন করে বিলে টিআরএম চালু করতে বাধ্য করেছিল। ১২ বছর ধরে বিলে টিআরএম নেই। মন্ত্রী বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু হয়নি। এতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে। ভবদহে বর্তমানে নদীতে সেচের ব্যবসা চলছে। এতে জলাবদ্ধতা থেকে মাপ পাওয়া যাবে না।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদীর জমিতে ২৪-২৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। মোহনায় ভাটার সময় বালুচর জেগে ওঠে। এতে উজানের পানি যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবহৃত পাওয়ার পাম্প ও নদী খনন কার্যক্রম সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল বলেন, ভবদহ জলাবদ্ধতা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। তবে স্থানীয় একটি মহলের অসহযোগিতা এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেওয়া অর্থের কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি এলাকার মানুষ। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ভবদহ জলাবদ্ধতা সমাধানের বিষয়ে সংসদে কথা বলেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, ভবদহের ডিপিটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৯ কোটি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে লিংক ক্যানেল খনন করে বিল থেকে পানি নামার গতি ত্বরান্তিত করতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা