× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিলেটের ঐতিহ্য খিচুড়ি-আখনি

কাওছার আহমদ, সিলেট

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:০২ পিএম

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৪ পিএম

দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ খিচুড়ি। জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাাঁয়। প্রবা ফটো

দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ খিচুড়ি। জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাাঁয়। প্রবা ফটো

রমজানে ইফতার আয়োজন এক প্রকার সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী ইফতারসামগ্রী রয়েছে। তেমনই সিলেটের ঐতিহ্য খিচুড়ি ও আখনি। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে ইফতারের রন্ধনশৈলীতে এ দুটি খাবার ঐতিহ্যবাহী হিসেবে স্থান পেয়েছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় একসময় ঘরে ঘরে খিচুড়ি ও আখনি তৈরি হলেও এখন তা বাণিজ্যিকভাবেও বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে খেজুর, জিলাপি, পিয়াজু, ছোলা, আলুর চপ, ডিমের চপ, শরবত, শাকের বড়া, পাকুড়া, বেগুনি, বাখরখানি, ফিরনি, ফলমূল ইত্যাদি তো আছেই। কিন্তু খিচুড়ি ও আখনি অনেকটা অঘোষিত বাধ্যতামূলক বিষয় হয়ে আছে।

সিলেটে ইফতারের আয়োজন ঘরোয়া পরিসরে ভুনা কিংবা পাতলা খিচুড়ি, আর মেহমানদারিতে আখনি করা হয়। ইফতারিতে যত মুখরোচক আইটেমই থাকুক না কেন, সিলটের রোজাদাররা এ দুটো ছাড়া যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ইফতার পাঠানোর ক্ষেত্রেও আখনি ও খিচুড়ি অনেকটা অবধারিতভাবে প্রধান মেন্যু হয়ে গেছে। সিলেটের প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ইফতারি পাঠানোর সময়ও আখনি ও খিচুড়ি দেওয়া হয়।

এবার রোজার দ্বিতীয় দিন বুধবার নগরীর চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সোবহানিঘাট, কদমতলি, সুরমা মার্কেট, তালতলা, শেখঘাট, লামাবাজার, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, আম্বরখানা, শাহি ঈদগাহ, টিলাগড়, মেজরটিলা, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, উপশহরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে নানা পদের ইফতারির সঙ্গে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে। সবখানেই ক্রেতাদের ভিড়।

দোকানিরা জানান, অন্য বছরের মতো এবারও ইফতারির মধ্যে চিকেন ও বিফ আখনি এবং পাতলা খিচুড়ির চাহিদা বেশি। অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে জিলাপি, বেগুনি, আলুর চপ, ডিম চপ, পিয়াজু, বাখরখানি, শাকের পাকুড়া, চিকেন ফ্রাই, টিকিয়া, কাবাব, রোল, বিফ চাপ, ফিশ কাবাব, হালিম, চিকেন বারবিকিউ চাপ, চিকেন বারবিকিউ লেগ, চিকেন সাসলিক, বিরিয়ানি ও তেহারির কদর রয়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিফ আখনি প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, চিকেন আখনি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, পাতলা খিচুড়ি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

জিন্দাবাজার এলাকার পানসী রেস্তোরাঁর বিক্রয় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আহমদ বলেন, অন্য বছরের মতো এবারও চিকেন ও বিফ আখনির চাহিদা শীর্ষে রয়েছে। প্রথম রোজায় এই দুই ধরনের আখনি কমবেশি ৩০০ কেজি বিক্রি হয়। এর বাইরে পাতলা খিচুড়ি ৩০ কেজির মতো বিক্রি হয়েছে। ধীরে ধীরে ক্রেতাদের উপস্থিতি আরও বাড়বে। তখন বিক্রিও বেড়ে যাবে।

পাতলা খিচুড়ির ব্যাপক চাহিদা নিয়ে কথা হয় টিলাগড় এলাকার ৮৩ বছরের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রমজানে পাতলা খিচুড়ি, আলুর চপ ও শাক দিয়ে ইফতার করেন। খেজুর, শরবত ও অন্যান্য আইটেম থাকলে ভালো, না থাকলেও তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু পাতলা খিচুড়ি থাকতেই হবে। প্রায় ৬৫ বছর ধরে এভাবেই ইফতার করছি।’

পাতলা খিচুড়ি ও আখনির রন্ধনশৈলী নিয়ে কথা হয় মৌলভীবাজারের আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাহানা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, পাতলা খিচুড়ি দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটা শুধু চাল-পানি দিয়ে করা হয়, যেটাকে ‘জাউ’ বলা হয়। অন্যটা বেশি উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রথমে চাল ও ডাল একসঙ্গে ভালোভাবে ধুয়ে কিছুক্ষণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চাল ও ডালের সঙ্গে তেল অথবা ঘি, পিয়াজকুঁচি, রসুনকুঁচি, আদা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি উপকরণ যোগ করে রান্না করা হয়। এ ছাড়া চুলার ওপরে থাকাবস্থায় যতবেশি নাড়াচাড়া করা হবে, তত বেশি উপকরণগুলো গলবে এবং খিচুড়ি সুস্বাদু হবে। আর আখনি তৈরি করা হয় পোলাও চাল দিয়ে। এজন্য একে একসঙ্গে আখনি-পোলাও ডাকা হয়। গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংস ছাড়া আখনি হয় না। যে মাংস যুক্ত করা হয়, সেই মাংসের নাম উল্লেখ করে আখনি পরিচিতি পায়। যেমন, গরুর আখনি, খাসির আখনি ইত্যাদি। পোলাও-বিরিয়ানির রান্নার প্রণালির সঙ্গে আখনির মিল রয়েছে। তাই সিলেটের আখনি খেয়ে বাইরের জেলার মানুষেরা পোলাও-বিরিয়ানির স্বাদ অনুভব করেন বলে জানান এই শিক্ষিকা।

পাতলা খিচুড়ির উপকারিতা জানিয়ে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইশফাকাজ্জুমান সজীব বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ অনেক কিছু মিশিয়ে এটি রান্না করা হয়। এ ছাড়া সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতারের সময় পাতলা খিচুড়ি খেলে হজমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা