ভাইয়ের কাছে জিম্মি নাবিকের বার্তা
নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪ ২১:৫০ পিএম
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের অ্যাবল সিমেন আনারুল হক রাজু।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ‘এবি’ (অ্যাবল সিমেন) হিসেবে কর্মরত নোয়াখালীর মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু তার বড় ভাই মো. জিয়াউল রনিকে খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘সোমালিয়ান পাইরেটস অনবোর্ড। বাঁচি থাকলে দেখা হবে, দোয়া কইরেন।’
এরপর আরেকটি ভয়েস বার্তায় বলেন, ‘আমাদর সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দোয়া করবেন।’
আনারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের (আজিজুল হক মাস্টারের বাড়ি) আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা দম্পতির ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জিম্মি নাবিক আনারুলের বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই কান্নাকাটি করছেন। তাদের একটিই দাবি, জিম্মিদের উদ্ধার করে সরকার যেন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
রাজু বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স করেন।
আরও পড়ুন: জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি
আনারুলের বড় ভাই মো. জিয়াউল রনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আনারুল সবার ছোট। ২০১৬ সাল থেকে সে জাহাজে কর্মরত রয়েছে। গত নভেম্বরে সে সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। গতকাল সে আমার মোবাইলে মেসেজ লেখে- সোমালিয়ান পাইরেটস অনবোর্ড, বাঁচি থাকলে দেখা হবে, দোয়া কইরেন।’
মা দৌলত আরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঘর ভাঙা ছিল, এখন বিল্ডিং করতেছি। ঘরের কাজ শেষ হলে ছেলে জাহাজ থেকে এলে তাকে বিয়ে করাব। তার জন্য পাত্রী দেখতেছি। এরই মধ্যে গতকাল খবর পেলাম আমার ছেলেসহ ২৩ জন বাংলাদেশি অপহৃত হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের (সেতুমন্ত্রী) সহযোগিতা চাই।’
বন্ধু ইমরান বলেন, ‘গতকাল ভোর রাতে আনারুল হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে বলেছে, তাদের জাহাজের একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য দিয়েছে দস্যুরা। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
ছেলেসহ জিম্মিদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে আনারুলের বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘আমার ছেলেসহ সবাইকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কোম্পানীগঞ্জের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করছি। গতকাল থেকে আমাদের পরিবারে হতাশা ও আতঙ্ক। তার মা ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য মূর্ছা যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি নাবিকদের মধ্যে দুজনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। অ্যাবল সিমেন (নাবিক) হিসেবে মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু ও ফাইটার হিসেবে মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ। এর মধ্যে আনারুল হক রাজুর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। সালেহ আহমেদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
অপহৃত এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) মালিকানাধীন। জানা গেছে, জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। বুধবার মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজটিতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি, চলছে দরকষাকষি
এদিকে বুধবার সকালে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশি জাহাজটি এখন উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে। সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছনোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।