× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কংশের বুকে ধু-ধু বালুচর

আনিসুর রহমান, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ)

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১১:২৪ এএম

কংসের বুকে নেই আগের সেই বিশাল জলরাশি, যেদিকে চোখ যায় ধু-ধু বালুচর

কংসের বুকে নেই আগের সেই বিশাল জলরাশি, যেদিকে চোখ যায় ধু-ধু বালুচর

সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদ ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা। এ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নদ কংস। একসময় এ বড় নদটিতে নৌযানের চলাচল ছিল। উপজেলার গোয়াতলা বাজার থেকে পোড়াকান্দুলিয়া বাজার হয়ে নেত্রকোণার জারিয়া ও জাঞ্জাইল বাজারে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হতো। নাব্যসংকটে নৌপথে পণ্য যাতায়াতে ভাটা পড়েছে। বর্ষায় অল্প কিছুদিন নৌপথে চলাচল দেখা গেলেও কয়েক দিন পরই আর দেখা যায় না।

বর্তমানে কংসের বুকে জেগেছে বালুচর। নেই আগের সেই বিশাল জলরাশি। যেদিকে চোখ যায় ধু-ধু বালুচর। আগে যে কংসের বুকে ছিল ঢেউয়ের দোলা, সেই নদের দুই কূলে বাতাসে দুলছে মিষ্টিকুমড়ার ডগা। বিভিন্ন স্থানে দখল-দূষণ আর নাব্যসংকটে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী কংস। গত বছর নদের গোয়াতলা অংশ খনন করা হলেও পাল্টায়নি চিত্র।

জানা যায়, ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগে তুরার কাছে গারো পাহাড়ে এ নদের উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা, দুর্গাপুর, নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় প্রবাহিত হয়েছে; যার দৈর্ঘ্য ২২৫ কিলোমিটার।

কংসের এ বেহাল অবস্থার ফলে কৃষক চরম বিপাকে। কৃষি মৌসুমে পানিসংকট আর বর্ষায় নাব্যসংকটে পাহাড়ি ঢলে পানি আটকে থেকে ফসল নষ্ট হয়। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষক।

গোয়াতলা গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দন বলেন, ‘আগে নদী থেকে পানি নিয়ে জমি চাষাবাদ করতাম। খরচও অনেক কম হইত। এখন আর সেই বাউ (ব্যবস্থা) নাই। ক্ষেত লাগানির সময় আইলেই নদী শুকিয়ে যায়। ফলে সেচের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

নাব্যসংকটে শুকিয়ে যাওয়ায় দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে কংস। ফলে চাষের মাছের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে জীবনযাত্রায় খরচের চাপ বাড়ছে। তারাইকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আগে নদীগুলো গভীর ছিল। নদীতে জাল নিয়ে সব সময় দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতাম। এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। আস্তে আস্তে নদীও ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং শুকনা মৌসুম আসলে পানি শুকিয়ে যায়।’

রঘুরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লাহ সুমন বলেন, ‘কংস নদের তীরে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। কয়েক বছর আগেও কংস ছিল খরস্রোত। বছরজুড়ে নদে থাকত পানি। গ্রামের সাধারণ মানুষ জাল ফেলে মাছ ধরত। পাওয়া যেত প্রচুর সুস্বাদু মাছ; যা এখন কেবল স্মৃতি। কালের বিবর্তনে নাব্য হারিয়ে অস্তিত্বসংকটে কংস।’ স্থানীয়দের দাবি কংস পুনরায় খনন করে নাব্যসংকট কাটিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরিয়ে আনার।

সচেতন সমাজের দাবি, নদ বাঁচাতে ড্রেজিং করে প্রতি বছর যাতে পলি ভরাট না হয় সেজন্য মূল নদে ব্যারাজ নির্মাণ করা জরুরি। এ ছাড়া শাখা নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করা না গেলে বড় নদীগুলো বাঁচানো সম্ভব না।

ময়মনসিংহ জেলা নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘বেপরোয়া দখল-দূষণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। এ থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত উদ্যোগ।’

গোয়াতলা ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘সময়মতো নদটি খনন করা হয়নি, আমি এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছিলেন খনন করে দেবেন; কিন্তু আর করা হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান, তিনি বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবেন।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, তিনি বিষয়টি দেখবেন।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা