প্রবা প্রতিবেদক ও শেরপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ০১:০৬ এএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৫১ এএম
ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিহাবুল আরিফ। ছবি কোলাজ : প্রবা
তথ্য চাইতে যাওয়া সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডের ঘটনায় শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিহাবুল আরিফকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ মার্চ ঘটে যাওয়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবিবার নকলায় সরেজমিন তদন্তে যান তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক। সোমবার সকালেও কারাফটকে সাংবাদিক রানার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষাৎ করেন তিনি। জেলা প্রশাসকের বক্তব্যও নিয়েছেন। এরপর ঢাকায় ফিরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, যে প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক রানাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার অন্যতম শর্ত অভিযুক্ত নিজেকে তার দোষ স্বীকার করতে হবে। অথচ এ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, তাকে আটকের পর জোর করে চাপ প্রয়োগ করে অপরাধ স্বীকার করানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাংবাদিক রানার বিরুদ্ধে তারা যেসব তথ্য পেয়েছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুযোগ ছিল। অথচ তা না করে ইউএনও নির্দেশ দিয়ে এসিল্যান্ডকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিয়েছেন। এতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এ ঘটনায় ইউএনও-এসিল্যান্ড দুজনকে শিগগিরই প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন কর্মকর্তা পদায়ন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে জামিন দিয়েছেন আপিল আদালত। মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন। রানার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধার এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি আরিফুর রহমান সুমন।
জামিন আদেশের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা কারাগার থেকে শফিউজ্জামান রানা মুক্তি পান বলে জানান জেল সুপার হুমায়ুন কবীর খান।
পরে এক প্রতিক্রিয়ায় শফিউজ্জামান রানা ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষ স্বীকার করেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়ার আগে আমাকে স্যরি বলার জন্য বলেছিল। আমি বলেছি, আমি কোনো অপরাধ করিনি, আমি তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন নিয়ে আসছি। আমি স্যরি বলতে পারব না। এরপর ওসিকে ফোন দেয়। আমি ও আমার বড় ছেলে সিসি ক্যামেরার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর ওসি সিভিল কাপড়ে এসে আমাকে নিয়ে যায়।’
শফিউজ্জামান রানা জানান, তিনি কোনো অন্যায় করেননি, ভুল স্বীকারও করেননি। তিনি তার জায়গায় অবিচল আছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শফিউজ্জামান রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার জানান, ৫ মার্চ মঙ্গলবার শফিউজ্জামান তার ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী শীলা আক্তারের কাছে দিয়ে রিসিভড কপি চান। ওই কর্মচারী তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর শফিউজ্জামান আবার তার কাছে অনুলিপি চান। পরে শফিউজ্জামান জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। এতে ইউএনও আরও ক্ষুব্ধ হন এবং নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন।