নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ২২:৩৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে রোজার পণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। প্রায় সব পণ্যই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ইফতারপণ্য ছোলা, চিনি, খেজুর, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছে সাধারণ ক্রেতা। তবে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, রোজার মাসজুড়ে অভিযান চলবে। কোনো ব্যবসায়ীকে মালামাল মজুদ করতে দেওয়া হবে না।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর রমজানকে ঘিরে বাড়তি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইফতারপণ্যকে টার্গেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তা-ই হচ্ছে। রোজায় ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকারকে বাজার তদারকিতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রোজাকে ঘিরে প্রায় দুই মাস আগে থেকেই অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ, মুরগি ও গরুর মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে অনেক নিত্যপণ্যের দাম। দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবে তেল ছাড়া আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়েনি অন্য তিন পণ্যে। এই অবস্থায় ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠছে।
সরেজমিন শহরের প্রধান বাজার দিগুবাবুর বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা কেজিতে ৫ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ১০৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরেই মাঝারি আকারের লেবুর দাম প্রতি হালিতে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি খোলা চিনি খুচরায় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
শুল্ক কমানোর পরও কয়েক দফা বেড়েছে খেজুরের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরায় সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালোমানের খেজুর ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। নিম্নমানের খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাড়তি চাহিদার কারণে প্রতিবছরই রোজার দুই-তিন দিন আগেই বেগুনের দাম বেড়ে যায়। এবার বাজারে বেগুনের সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও ইফতারপণ্যের মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পণ্যটির। বেগুনের দাম কেজিতে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দেশি শসা ২৫ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দিগুবাবুর বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে এসে দেখি দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একেকজন একেক রকমভাবে দাম চাচ্ছে। বাড়তি দামের কারণে বাজারের তালিকা অনুযায়ী কিছুই কিনতে পারছি না।
চাকরিজীবী নাহিদ আজাদ স্বপন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকায় বেগুন কিনেছি। সেই বেগুন এখন চাচ্ছে ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। রোজায় মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হলে সরকারকে বাজার তদারকিতে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, পাইকারিতে কারওয়ান বাজারে দুই দফায় সবজির দাম বেড়েছে। ভালোমানের লম্বা বেগুন কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শসার সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। দেশি শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ক্ষীরা কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। মাঝারি ও বড় সাইজের লেবুর হালি ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
কাঁচাবাজারের মুদি দোকানের বিক্রয়কর্মী আরিফ হাসান বলেন, পাইকারিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি ও ছোলার দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। রমজানে আর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগে প্রতিবছরই রোজার দুই-এক দিন আগে মুনাফালোভীরা রোজায় প্রয়োজন এমন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা নতুন না, প্রতিবছরই এমনটা হয়ে থাকে। ক্রেতারা যদি কিছুটা সংযমী হয়ে একসঙ্গে এক মাসের পণ্য না কিনে ধাপে ধাপে কেনে, তাহলে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না। রোজাকে ঘিরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা আশা করছি, তার সুফল শিগগির ভোক্তারা পাবে।