অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ২২:২৮ পিএম
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। প্রবা ফটো
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন ভারতের ১০ রাজ্য। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে তিনি প্রায় তিন মাস পর কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ির নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ওই এলাকার বাসিন্দা সুশীল তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। এর আগে গত ৭ মার্চ ভারতে ভ্রমণ শেষে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছান তিনি।
সাইকেলে মোট ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেন তিনি। ভ্রমণকালে মানুষের মাঝে স্বেচ্ছায় রক্তদান, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতন এবং মাদক গ্রহণের কুফল তুলে ধরেন তিনি। গত বছরের ৮ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৪০ দিনে তিনি সাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১ দিনে তিনি দেশের দীর্ঘতম সড়ক টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া বাইসাইকেলে ভ্রমণ করেছিলেন।
বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে তিনি সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ভ্রমণ শুরু করেন। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭২ দিনে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরেলা, গোয়া ভ্রমণ করেন। ভ্রমণের সময় তিনি মন্দির, গির্জা, পেট্রলপাম্প, বাসস্টেশন, ট্রেন স্টেশন, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁবু ক্যাম্পিং করে রাত যাপন করেছেন। এ ছাড়া অনেক স্থানীয় ব্যক্তিও তাকে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ভারতের সবকটি রাজ্যে সাইকেলে ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও ভিসার নিয়মের জন্য সম্ভব হয়নি। কারণ পর্যটক ভিসার ৯০ দিনের বেশি থাকা যায় না। ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দুই মাস পর বাকি ১৯টি রাজ্য ভ্রমণ করবেন বলেও জানান তিনি।
সাইকেল ভ্রমণে বীর কুমারকে পানাম সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদসহ বিভিন্ন ব্যক্তি সহায়তা করে পাশে ছিলেন। তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সাইকেলে ভ্রমণের পাশাপাশি তিনি রক্তদানে উৎসাহ, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন। এ ছাড়া ভারতের ১০টি রাজ্যের দর্শনীয় স্থানসমূহ পরিদর্শন করে সেখানকার এমপি, প্রশাসক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। বিশেষ করে কর্ণাটক রাজ্যের মহাবোধি সোসাইটি বৌদ্ধ বিহার সংবর্ধনা দিয়েছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাচির এমপির বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্কুল ও বিভিন্ন রাজ্যের সাইকেল গ্রুপের পক্ষ থেকেও তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বীর কুমার। তাদের সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
তবে মাঝেমধ্যে নিরাপদ থাকার বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং ও কষ্টের ছিল বলে জানান বীর কুমার। তিনি জানান, এক রাতে পেট্রলপাম্পে অতিরিক্ত মদ পান করা এক ব্যক্তির সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সহায়তা নিতে থানায় যেতে হয়েছিল।