× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আখাউড়া ইমিগ্রেশন

ঘুষ না দিলেই বৈধ যাত্রী হয়ে যায় অবৈধ

রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ১০:০০ এএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৫ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। প্রবা ফটো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। প্রবা ফটো

পাসপোর্ট-ভিসা বৈধ। কিন্তু ইমিগ্রেশনে গেলেই অবৈধ হয়ে যায়। আবার টেবিলমানি (ঘুষ) দিলেই সবকিছু বৈধ হয়ে যায়। এরকম রীতিনীতি চালু রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে। এ পথে যাতায়াত করার সময় পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঘুষ নেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার যাত্রী এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ পারাপার হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও যাতায়াতে সময় ও খরচসাশ্রয়ী বিধায় দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করেন। যাত্রী পারাপার বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। তবে বেড়েছে যাত্রী হয়রানি।

অনুসন্ধান ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতগামী যাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক প্রকার নিয়ম করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্টে প্রাইভেট সার্ভিস লেখা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, নবায়ন জাল বলে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, নামের বানানে ভুল হলে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা, কোনো নারী যাত্রী একা ভারতে গেলে তার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা, পাসপোর্টে ভারতসহ অন্য দেশের ভিসা থাকলে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, জন্মতারিখের সঙ্গে আইডি কার্ডের মিল না থাকলে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। 

আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়া এই পদ্ধতি চালু করেছেন বলে অভিযোগ। তার এ ঘুষবাণিজ্যে সহযোগী পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর। কনস্টেবল জাহাঙ্গীরের মাধ্যমেই ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন ওসি হাসান আহমেদ ভুঁইয়া।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মহিউদ্দিন সম্রাট নামের এক যাত্রীকে বহির্গমন ডেস্ক থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ওই যাত্রীকে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে ডেস্কে থাকা পুলিশ সদস্য জানান, দেশের বাইরে যেতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ কম হলেও তিন মাস থাকতে হবে। আর ওই যাত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে দেড় মাস। এ কারণে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কিছু সময় পর দেখা যায় ওই যাত্রী ভারতে গমন করছেন। ওই যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ইমিগ্রেশন ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভুঁইয়াকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বহির্গমন ডেস্কের কাজ শেষ করে ভারতে যাচ্ছেন।

বাসু দেব বিশ্বাস নামে এক যাত্রী বলেন, তার পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল তিন মাস। ইমিগ্রেশনে গেলে তার পাসপোর্টের মেয়াদের বিষয়ে আটকে দেয়। পরে তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি রফাদফা করে ১ হাজার টাকা দিয়ে ভারতে যান।

মাহতাব আলী খান নামে আরেক যাত্রী বলেন, ব্যাগ তল্লাশি করার দায়িত্ব কাস্টমসের। কিন্তু আখাউড়া ইমিগ্রেশনে গেলে তারা ব্যাগ তল্লাশির নামে নানাভাবে হয়রানি করে। তা ছাড়া ডলার এন্ডোর্সমেন্ট নেই কেন; এসব বলেও হয়রানি করে টাকার জন্য। টাকা দিলে সবকিছু বৈধ হয়ে যায়। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিলে আর কোনো ঝামেলা হয় না। আমাদের দাবি, এসব হয়রানি বন্ধ করা হোক।

চট্টগ্রামের এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার বাবা অসুস্থ। ভারতে চিকিৎসা শেষে গত মাসে দেশে ফিরে আসেন। তিনি তার বাবার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ও ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। তার ভিসা হলো রোগীর অ্যাটেনডেন্ট ভিসা। তিনি তার বাবার চিকিৎসার সমস্ত কাগজপত্র সঙ্গে নিয়েছেন। তাকে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আটকে দিলে তিনি ৩ হাজার টাকা দিয়ে পার হন। 

এ বিষয়ে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য না। এখানে আমি বা আমার কোনো লোক যাত্রী হয়রানি এবং যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করা হয় না। এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পাসপোর্টের মেয়াদ দেড় মাস থাকা যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে ওই যাত্রী কীভাবে ভারতে গেলেন জানতে চাইলে এ বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জয়নাল আবেদীন বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা