বিমানের টিকিট কেটেও দেশে ফেরা হলো না ইকবালের

দক্ষিণ আফ্রিকায় এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় সময় সোমবার (১১ মার্চ) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে রবিবার বিকাল ৫টার দিকে ডারবান শহরে ব্যবসায়ীর নিজ দোকানের সামনে হামলার ঘটনা ঘটে। ১৫ মার্চ দেশে ফেরার জন্য টিকিট করেছিলেন তিনি।

নিহত ইকবাল হোসেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ২ নম্বর কেশারপাড় ইউনিয়নের কেশারপাড় মধ্যপাড়া গ্রামের মিন্নাত আলী ভূঁইয়া বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা শফি উল্যার ছেলে। 

স্বজনদের বরাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ। 

নিহতের ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সময় রবিবার বিকালে ডারবানের মার্কেটে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছিল ইকবাল। এ সময় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা ইকবালের মাথায় গুলি করে তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করলে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

নিহতের স্ত্রী রওনক জাহান বলেন, ‘আমার স্বামী প্রায় সাত বছর আগে জীবিকার সন্ধানে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। আমাদের দুই ছেলেসন্তান রয়েছে। কয়েক মাস আগে তার দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তখন অনেক টাকার মালামাল লুট হয়। এবার আমার স্বামীকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আমার দুই সন্তান নিয়ে এখন আমি কই যাব? আমার তো সব শেষ হয়ে গেল।’ 

নিহতের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘১৫ মার্চ দেশে ফেরার জন্য টিকিট কেটেছিলেন আমার ভাই। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

এর আগে ৩ মার্চ রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে‌ বাংলাদেশি দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন সেনবাগের অর্জুনতলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মানিকপুর গ্রামের মো. হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে মো. মহিন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী রুনা আক্তার। রবিবার দুপুরে দুজনের মরদেহ নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউএনও জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনবাগের কেশারপাড় গ্রামের ইকবাল হোসেনের নিহত হওয়ার ঘটনা শুনেছি। আসলে সরকারিভাবে বৈধপথে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা গিয়েছেন সবাই অবৈধভাবে গিয়েছেন। তাই কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে মরদেহ দেশে আনতে সরকার সহযোগিতা করে। আমি নিহত ব্যক্তির মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সহযোগিতা করব। এর আগেও স্বামী-স্ত্রী দুজন নিহত হয়েছেন। একই উপজেলায় পর পর দুটি ঘটনায় আমরা শোকাহত।’