প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৫ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৪ পিএম
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অগ্নিকাণ্ডে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আগুনে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। এতে দুই হাজারেরও বেশি পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া গমসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বাড়িও রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী-তীরবর্তী রায়টা, নিশ্চিন্দ্রপুরপাড়া, মাধবপুর, গোসাইপাড়া গ্রামের বরজে আগুন লাগে। ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আরেফিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুণ্ডু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকার পানের বরজ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন গোসাইপাড়া, রায়টা, মাধবপুর, নিশ্চিন্দ্রপুরপাড়াসহ আশপাশের গ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সেটা জানা যায়নি। এই অগ্নিকাণ্ডে কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের মধ্যে সেলিম, আসলাম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আশরাফ, ইনামুল, মুক্তার, মন্টু সরদার, আমিন উদ্দিন, আবদুল হান্নান ও আমিন প্রামাণিক বলেন, আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের রাস্তা এই বরজ। আমরা অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে পান চাষ করেছিলাম। এখন কীভাবে আমরা ঋণ শোধ করব বা আবার ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো কীভাবে মেরামত করব, তা ভেবে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কিছুটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে পুনরায় আমরা বরজ তৈরি করে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।
পানচাষি আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ১২ বিঘা জমিতে পান ছিল। পানের বরজ আগুনে না পুড়ে আমার বসতবাড়ি পুড়ে গেলেও এত কষ্ট পেতাম না। বরজ থেকে আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখন আমি পরিবারের দুই বেলা খাবার কীভাবে জোগাড় করব!’
পানচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বরজের পান দুই মাস পর বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দেব বলে দেখাশোনা করছিলাম। এখন বিয়ে তো দূরের কথা, কীভাবে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।’
ভেড়ামারা পানচাষি সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি পানচাষির কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে। দুই মাস পরেই বরজ থেকে পান ভাঙা শুরু হতো। চাষিরা এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে? কয়েকশ চাষি ১২ বিঘা, ১০, ৫ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এ ছাড়া বরজে শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অগ্নিকাণ্ডে তাদের পরিবারেও দুর্দশা নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের জন্য সহায়তা কামনা করছি।’
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ডে পানচাষিদের ও এলাকার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এই অঞ্চলের অর্থনীতি নির্ভর করে পান চাষের ওপর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রায়টা পাথরঘাট এলাকায় বরজে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। কিন্তু বাতাসে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। চারটি ইউনিট মিলে প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুণ্ডু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম মেনে সহায়তা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের স্টক ইয়ার্ডে আগুন
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের স্টক ইয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি স্টেশনের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কর্ণফুলী ফায়ার স্টেশনের ইন্সপেক্টর শোয়াইব উদ্দিন মুন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিগারেটের আগুন থেকে ওই ইয়ার্ডে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ছয়টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করে। এক ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
টাঙ্গাইলে লুঙ্গি কারখানায় আগুন
টাঙ্গাইলে এটিএম লুঙ্গির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ক্ষুদিরামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ৪৫ মিনিট পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
টাঙ্গাইলের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটকে আনা হয়। তবে তিনটি ইউনিট কাজ করেই ৪৫ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কী কারণে আগুন লেগেছে তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি।
রামগঞ্জে পুড়ল ৪ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পানিয়ালা কমারোড বাজারে অগ্নিকাণ্ডে চারটি দোকান পুড়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে দারুস সালাম মার্কেটের সামনে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
রামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শ্রীপুরে গোয়ালঘরের আগুনে পুড়ে মারা গেছে ২ গরু
মাগুরার শ্রীপুরে গোয়ালঘরে অগ্নিকাণ্ডে দুটি গরু পুড়ে মারা গেছে। এ সময় আরও একটি গরু আহত হয়। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর উত্তরপাড়া গ্রামের হাসেম মোল্যার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকরা)