× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পেঁচারদ্বীপে খাল-প্যারাবন দখল করে রিসোর্ট

নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৯ পিএম

প্যারাবনের কয়েক একর জায়গা জবরদখল করে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। বনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজারো গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে নানা স্থাপনা, তৈরি হয়েছে বাঁশের ঘেরাও। প্রবা ফটো

প্যারাবনের কয়েক একর জায়গা জবরদখল করে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। বনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজারো গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে নানা স্থাপনা, তৈরি হয়েছে বাঁশের ঘেরাও। প্রবা ফটো

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের পেঁচার দ্বীপে প্যারাবন ও খাল দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ করছে মারমেইড কর্তৃপক্ষ। সাগরপারের সরকারি ১ নম্বর খাসখতিয়ানের ৫০০ নম্বর দাগের বিশাল এলাকা দখল করে নানান স্থাপনা নির্মাণ চলছে। এস্ককাভেটর দিয়ে মাটি কেটে প্যারাবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। নির্বিচারে কাটা হয়েছে প্যারাবনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজারো গাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে প্যারাবনের জীববৈচিত্র্যসহ পাখির আবাসস্থল। ইতোমধ্যে প্যারাবন দখল করে দেওয়া হয়েছে সীমানা পিলার ও ঘেরাও। নির্মাণ করা হয়েছে ৫০০ ফুটের লম্বা কাঠের সাঁকো। এভাবে প্যারাবনের কয়েক একর জায়গা জবরদখল করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। 

স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় মারমেইড কর্তৃপক্ষ সাগরপারের সরকারি জমি জবরদখল করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্যবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাসহ পরিবেশবাদীরা।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচার দ্বীপের আবাহানা ও জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল চর ও রেজু নদীর অংশ। কালের পরিক্রমায় রেজু নদীর এ অংশ ধীরে ধীরে ভরাট খালে পরিণত হয়। এ খাল থেকে একসময় স্থানীয়রা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। চর ও ভরাখালে প্রায় ২০ বছর আগে প্যারাবন সৃজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকম। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবেও প্যারাবন জন্মায়। এই এলাকা ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়। জায়গাটি সরকারি ১ নম্বর খাসখতিয়ানভুক্ত খাল ও চর শ্রেণির। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে ঝাউবন। কিন্তু এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দাবি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় প্যারাবন কেটে জবরদখল শুরু করে মারমেইডের মালিক সোহাগ ও তার ভাই শাহিন। প্যারাবনের গাছ ও ঝাউগাছ কেটে তারা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে পেঁচার দ্বীপের আবাহানা এলাকায় ক্যাম্প-ইন কক্স নামে রয়েছে মারমেইড কর্তৃপক্ষের রিসোর্ট। এর পশ্চিমে বিশাল চর, প্যারাবন ও ভরাট খাল। যেখানে প্রতিদিনই আসে জোয়ারের পানি। এ বিশাল চর ও খালে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা কাঠের সাঁকো। এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। কাটা হচ্ছে প্যারাবন ও ঝাউগাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গাছের ডাল। প্যারাবনের গাছ ও ঝাউগাছ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কটেজ। প্যারাবনের মধ্যে নির্মিত হয়েছে রেস্টুরেন্ট। এভাবে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে প্যারাবনে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারমেইডের জমি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আলম সুলতান বলেন, জমিটি খাসখতিয়ানের ঠিকই। কিন্তু আরএস ৬৫ ও ৪৩ খতিয়ানের ২ একর ২৪ শতক জমির নথিমূলে মালিক মরহুম গোলাম বারীর ৫ পুত্র ও ৩ কন্যা বিএস সংশোধনে ২৪১ নম্বর মামলা দায়ের করে ডিক্রি পান। তাদের কাছ থেকে মারমেইড কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রি বায়না করে কাজ করছে।

তবে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম জানান, এ জমি সম্পূর্ণ খাসখতিয়ানভূক্ত। ১ নম্বর খাসখতিয়ানের ৫০০ দাগের সরকারি এ জমিতে তারা অবৈধভাবে জবরদখল ও স্থাপনা নির্মাণ করছে। এমনকি এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কাটার কথা শুনে সরেজমিন পরিদর্শন করে এসবের সত্যতা পেয়েছেন। তাদের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, দিনদুপুরে যেভাবে প্যারাবন, খাল ও সাগরপাড় দখল, হাজার হাজার গাছ নিধন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় জীববৈচিত্র্যবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা আরও উদ্বেগজনক। 

এসব পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবেশবাদী এ নেতা।

স্থানীয় পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল-এর নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও প্যারাবন ধ্বংস করে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সেটিও আবার কক্সবাজারের মতো অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিমছড়ি-পেঁচার দ্বীপসংলগ্ন এলাকায়। সাগরতীরের গাছগাছালি উজাড় করা মানেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনা। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, যেখানে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে ছোটকাল থেকে দেখে আসছি জোয়ার-ভাটা খাল, প্যারাবন, বিশাল চর ও ঝাউবন। জায়গাটি সরকারি খাসখতিয়ান বলে জানা রয়েছে। বছরের পর বছর নানা কৌশলে দখল হচ্ছে এ জায়গা। বিশাল কাঠের সাঁকো তৈরি হয়েছে। সেখানে এখন অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় তহশিলদার ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা বারবার নিষেধ কলেও স্থাপনা নির্মাণ ও জবরদখল বন্ধ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে মারমেইডের মালিক সোহাগ ও তার ভাই শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। জমি দেখাশোনার দায়িত্বরত সৈয়দ আলম সুলতান জানান, তারা দেশের বাইরে রয়েছেন।

প্যারাবন কেটে স্থাপনা নির্মাণের সত্যতা স্বীকার করেছেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিরূপম মজুমদার। তিনি জানান, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে কাজ না করার জন্য বলা হয়েছে। নতুন করে কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন করে কাজ চালানো হচ্ছে বলে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে আবারও তদন্ত দল পাঠানো হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা