ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট
ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৫ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৭ পিএম
ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটের নষ্ট ইউটিলিটি ফেরি দুটি পড়ে থাকায় অপচয় হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর ধাওয়াপাড়া জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ফেরি ও নাব্যতা সংকটের কারণে নদী পারাপারে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ। ফেরি কম থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোটে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে নদী পারাপারে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এদিকে অকেজো ফেরি দুটি ফেলে রাখায় নষ্ট করা হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা। যানবাহন থেকেও দ্বিগুণ ফেরি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এক যুগেরও বেশি সময় আগে সড়ক পথের দূরত্ব কমানো এবং সময় ও অর্থ বাঁচাতে রাজবাড়ী থেকে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, ফরিদপুর, মাগুরা ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১০ জেলার যোগাযোগের সুবিধার্থে নৌরুটটি চালু হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এ রুটে দুটি ইউটিলিটি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হতো। এ ঘাট দিয়ে চলাচলে রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনার দূরত্ব কমে যায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বিআইডব্লিউটি কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছ থেকে ঘাটটির দায়িত্ব বুঝে নেয়। এরপর থেকে নানা সমস্যা ও দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথে যাতায়াতকারী ও যানবাহন চালকরা। ফেরির সংখ্যা কম, নাব্যতা সংকট ও যানবাহন থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহের কারণে সুফলের চেয়ে বেশি দুর্ভোগই পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘাটে এসে সঠিক সময়ে পার হতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। ফলে বাধ্য হয়ে এখান থেকে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোটে কয়েকগুণ অর্থ খরচ করে চলাচল করছেন। নাব্যতা সংকটে যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচলে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পারাপার। কর্তৃপক্ষ তাদের খেয়ালখুশিমতো ফেরি চলাচল করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘাট পরিচালনায় নেই কোনো শৃঙ্খলা।
এদিকে বন্ধ হওয়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সচল দুটি ইউটিলিটি ফেরি মাটিতে ফেলে রাখায় মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা। এ নৌরুটে বর্তমানে করবী ও ক্যামেলিয়া নামে দুটি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করছে।
এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী রেজোয়ান বলেন, আমি বেশিরভাগ সময় রাজবাড়ীর ধাওয়াপাড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুট দিয়ে চলাচল করি। বর্তমানে ফেরি কম ও নাব্যতা সংকটে ফেরি পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। সময় লাগছে প্রায় দ্বিগুণ।
আরও এক যাত্রী প্রশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, দীর্ঘ সময় বসে থেকেও ফেরি পার হতে না পারায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোটে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে নদী পার হতে হচ্ছে আমাদের।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক রহমান বলেন, ফেরির আশায় ঘাটে এসে দেখি ফেরি নেই। আজ (গতকাল) আর ফেরি পার হতে পারব কিনা জানি না। এখান দিয়ে পার হতে নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, ফেরি দুটি মাটিতে ফেলে রেখে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা তো অপচয়। সরকারের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
বিআইডব্লিউটিসির ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাট টার্মিনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট ওহিদুজ্জামান বলেন, নাব্যতা সংকটে যানবাহন বোঝাই করে ফেরি পারাপার সম্ভব হচ্ছে না। যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে ফেরি বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তবে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। ফেরি চলাচলে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ফেরি ভাড়া বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।