স্থানীয় সরকার নির্বাচন
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫২ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১১:০৬ এএম
ভোটের জন্য প্রস্তুত আয়তনে দেশের ৭ম এবং জনসংখ্যায় ৮ম বৃহত্তম মহানগর ময়মনসিংহ। দিন শেষে জানা যাবে কে হচ্ছেন নগর সেবক- নতুনে নাকি পুরাতনেই আস্থা নগরবাসীর। ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের। প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। ভোটগ্রহণ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। গতকাল শুক্রবার সকালে শহরের সার্কিট হাউস মাঠ থেকে ১৩৪ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ইভিএম বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন অফিস জানিয়েছে, নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০ বুথে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। এ জন্য দেড় হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভোটার হচ্ছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। এজন্য স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্য, ১৭ টিম র্যাব ছাড়াও ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
মেয়র পদে প্রার্থী পাঁচজন থাকলেও ভোটের মাঠে সরব ছিলেন তিন প্রার্থী। তিনজনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এবারের নির্বাচন দলীয়ভাবে না হওয়ায় তারা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। এরা হলেন- সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচন উৎসবমুখর করে তুলেছিলেন তারা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তারা দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এই তিনজনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দুই প্রার্থী হচ্ছেন- জাতীয় পার্টি মনোনীত শহিদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু। তার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতা কর্মীরা কাজ করেছেন। এ ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। টিটু বলেন, গত পাঁচ বছরে সব সময় নগরবাসীর পাশে রয়েছি, কখনও ছেড়ে যাইনি। করোনা মহামারির কঠিন সময়ে যখন সবাই ঘরবন্দি তখনও আমি সবার পাশে থেকেছি। নিজ হাতে নগরবাসীকে নানান সহায়তা প্রদান করেছি। আমি বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা আমার ওপর আস্থা রাখবেন।
আশাবাদী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমও। তিনি বলেন, গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমার প্রতি নগরবাসীর আস্থা রয়েছে। ভোটাররা গত নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট দিতে পারেননি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন।
মেয়র টিটুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু। সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর নীরব সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করেছেন টজু। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো ধরনের কলঙ্কের দাগ নেই। নগরবাসীর সেবা করতে আমি প্রার্থী হয়েছি। আমার প্রতি দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক আস্থা রয়েছে। তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।
নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে।
২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে সিটি করপোরেশনে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালে এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়। মেয়র পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু।