সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম
কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃতি সেজেছে রঙিন সাজে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। প্রবা ফটো
আগুন রাঙা ফাগুনে যেন প্রকৃতি সেজেছে আপন সাজে। গাছের ডালে ডালে টকটকে লাল বর্ণচ্ছটায় মন রাঙানো শিমুল বসন্তে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। প্রকৃতি, কল্পনার রঙ আর বাস্তব যেন মিলেমিশে একাকার। নয়নাভিরাম এই দৃশ্যের দেখা মেলে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত দরবারপুর নোয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দু’পাশে, পুকুরপাড়ে শিমুল গাছে থাকা ফুলগুলো বাতাসে বাতাসে রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে। ২৪ থেকে ২৬ ফুট লম্বা মাঝারি আকারের দুটি গাছ। খুব বেশি শাখা-প্রশাখা নেই। তা ছাড়া গাছে গাছে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিময় বাতাস জানান দিচ্ছে নতুন লগ্নের। সূর্যের খরতাপে সেদিকে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনন্য সৌন্দর্য।
এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে আসা রাজীব সরকার বলেন, শিমুল ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করবে যে কাউকে। সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না ঘুরতে। অনেক দিন ধরে শিমুল ফুল দেখতে পরিকল্পনা ছিল। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে।
সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ইভা আক্তার ও তানিয়া আক্তার তিন্নি বলেন, অনেক দিন পর কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি গ্রামের বাড়িতে। তাই দুজন বিকালে ঘুরতে বের হয়েছি। বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে সারি সারি রক্ত রাঙা শিমুল ফুল দেখে সত্যিই অভিভূত।
জানা যায়, শিমুল গাছের সব অংশেই রয়েছে ভেষজগুণ। শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়।
অন্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। তা ছাড়া বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সাইবা লিন। বীজ ও কাণ্ডর মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয়। এবং অর্থনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্ব বহন করছে। তবে সময়ের সঙ্গে কমে যাচ্ছে শিমুল গাছ। করা হয় না বাণিজ্যিক চাষ।
সদর উপজেলার নোয়ার গ্রামের কৃষক সেলাম মিয়া বলেন, আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এখন আর দেখা যায় না। একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবুও এই গাছ বিলুপ্তির পথে। আগের যুগে শিমুলের তুলা দিয়ে লেপ, তোশক ও বালিশ তৈরি করা হতো। কিন্তু শিমুল তুলার মূল্যবৃদ্ধিতে গার্মেন্টের ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি তুলা, পাম্পের তোশক, বালিশসহ পঞ্চ, কার্পাশ তুলা আজ শিমুল তুলার স্থান দখল করে নিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক উম্মুন ওয়ারা শারমিন জানান, গ্রামবাংলার এই শিমুল গাছ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিত। আজ থেকে এক দশক আগেও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে শোভাবর্ধন করত এই শিমুল ফুল। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে, এমন নজিরও আছে।
জেলা শহরের গোরাঙ্গ বাজার লেপ তোশক তৈরিকারক ও বিক্রেতা ফরিদ মিয়া জানান, বর্তমানে শিমুল তুলা ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি, আর গার্মেন্টের ঝুট দিয়ে তৈরি তুলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, কার্পাশ তুলা ৫০০ এবং পঞ্চের তুলা ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুল গাছ বা তুলা চাষ করা হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। যার কারণে শিমুল গাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।