বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫০ পিএম
মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া আমানুল্লাহ হোসাইন ও তার বাবা আজগার আলী। প্রবা ফটো
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গয়েশবাড়ি গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আজগার আলীর ছেলে আমানুল্লাহ হোসাইন এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। ছেলের কীর্তিতে আজগার আলী খুশিতে আত্মহারা। কিন্তু ছেলের পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন, সেই ভাবনায় হতাশায় ভুগছেন তিনি।
আজগার আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মারাত্মক গেঁটে বাতে আক্রান্ত। শরীরে তীব্র ব্যাথার কারণে সারা দিন ভ্যান চালাতে পারেন না। শরীরে যতক্ষণ কুলোয় ততক্ষণ কাজ করে দুই থেকে তিনশ টাকা আয় করেন। এই টাকা থেকে ওষুধ কিনতে চলে যায় কিছু। বাকি টাকায় সংসার চলে না। এর মধ্যেও তিনি তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজগার আলীর দুই ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে আমানুল্লাহ এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৭১.৫ (মেধাতালিকায় ২ হাজার ৫৯৩তম) পেয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের ওপর ধার করে ছেলেকে ইতোমধ্যেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছেন তিনি। ছোট মেয়েটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
আমানুল্লাহ জানান, তিনি সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনার এডওর্য়াড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস এবং অষ্টম শ্রেণি ও এইচএসসিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় এবার তিনি দ্বিতীয়বারের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী। তার বাবা শরীরিক সমস্যা নিয়েও ভ্যান চালান। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। শুধু তাদের দুই ভাইবোনকে লেখাপড়া করাতে এত কষ্ট করছেন তিনি।
আমানুল্লাহ বলেন, ‘বাবার কষ্ট দূর করতে আমি চিকিৎসক হতে চাই। পাশাপাশি আমাদের মতো যারা দরিদ্র আছে, তাদের সেবা করতে চাই। আগে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। সেই খরচ জোগাতেই কষ্ট হতো। এখন কুমিল্লা গিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মাসে কম করে হলেও আট থেকে নয় হাজার টাকা খরচ। এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে, এটা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
আজগার আলী বলনে, ‘ছেলে ডাক্তারিতে চান্স পাওয়াতে এলাকার অনেকেই এখন আমাকে সম্মান করে। কিন্তু এই পড়ায় অনেক খরচ। এমনতিইে মাথার ওপর ঋণের বোঝা আর কিস্তির চাপ। এর ওপর শরীরও ভালো না। শরীর ভালো থাকলে না হয় আরেকটু বেশি সময় কাজ করতে পারতাম। এ অবস্থায় ছেলের পড়াশোনার এত খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, ভাবলেই বুক ভার হয়ে আসে।’
ধুলাউড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমানুল্লাহ খুবই মেধাবী। প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে পড়াশোনা করেও মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’
ভুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মাসুদ বলেন, ‘আমানুল্লাহ এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছে। ওর জন্য আমরা গর্বিত। ইতোমধ্যে আমানুল্লাহর জন্য আমরা ইউনিয়নের মেম্বারদের সহযোগিতায় আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছি।’
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। এমন মেধাবী ছাত্রের জন্য অবশ্যই আমরা কিছু করব। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’