× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষক-বেতন সবাই আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

শফিকুল ভূঁইয়া, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১২:০৮ পিএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১২:৫১ পিএম

চাপারকোনা মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র। প্রবা ফটো

চাপারকোনা মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র। প্রবা ফটো

সারি সারি শ্রেণিকক্ষ। সেখানে সারি সারি বেঞ্চ। ধুলোয় ধূসর। প্রধান শিক্ষকের অফিস ফাঁকা। সহকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা স্কুলমাঠে খোশগল্পে মশগুল। শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় উপস্থিতি ভালো। এমন স্কুল নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এসবের কিছুই জানেন না শিক্ষা কর্মকর্তা। জানেন না বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও। সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন চিত্র মিলেছে চাপারকোনা মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের এই বিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক-কর্মচারী কোনো রকম দায়িত্ব পালন না করেই দিব্যি বেতন-ভাতা নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়টির পাশের বাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানে লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা শুধু আড্ডা দিয়ে সময় কাটান। কয়েকজন শিক্ষার্থী মাঝেমধ্যে এলেও ঘণ্টাখানেক পরই আবার চলে যায়। তাই আমাদের মেয়েকে এখানে ভর্তি করিনি। আধা মাইল দূরের স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তাদের যাতায়াতে কষ্ট হলেও সেখানে তারা ভালো পড়ালেখা করছে।’

এই বিদ্যালয়ের জন্য জমি দিয়েছিলেন স্থানীয় খুশ মাহমুদ সরকার। তিনি মারা গেছেন। তার ছেলে সরোয়ার আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এক বিঘা জমি দিয়েছি। অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু আজ শিক্ষকদের অবহেলায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের এ বেহাল দেখে মনে হচ্ছে আমাদের শ্রমটাই বৃথা। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে এর জন্য দায়ী করব। তারা কী ভাবছেন জানি না। কেন তারা এমন হতে দিচ্ছেন বুঝতে পারছি না। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘একটি শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা কীভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন? তাদের বিবেক বলতে কিছু নেই? এটা কি উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেখেন না?’

বিদ্যালয়ের পাশেই হাছেন আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়ি। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রতিদিন স্কুলে আসেন আর চেয়ার নিয়ে মাঠে বসে পেপার পড়েন, গল্প করেন। যদিও দুই-চার জন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে, তাদের ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা দুই-এক ঘণ্টা গল্প করে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যায়।’

বিদ্যালয়টির হাল কেন এমন প্রশ্ন করলে সহকারী শিক্ষকরা কোনো কথা বলতে পারেননি। গণিত শিক্ষক আবু সাঈদ পাশ কাটিয়ে বলেন, ‘১৯৮৭ সনে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর তিনজন শিক্ষক অবসরে যান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুবই অপ্রতুল।’ কেন অপ্রতুল সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

তবে আরেকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় শিক্ষকদের মাঝে পাঠদানে অনীহা, অনিয়ম ও অনুপস্থিতি। প্রধান শিক্ষক এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কখনোই বিদ্যালয়ের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। তিনি কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না।’

তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম মানিক দায় নিতে রাজি না। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ দেখভালের দায়িত্ব কি শুধু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নাকি শিক্ষকদেরও আছে? শিক্ষকরা যদি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করান, সেটি দেখার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। প্রধান শিক্ষক কখনোই আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। বিষয়টি আমি এখন জানলাম এবং দেখব।’

প্রধান শিক্ষক আজমেরী বেগম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো সত্য নয়। সহকারী শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন এবং পাঠদান করান। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। উন্নত করার চেষ্টা চলছে।’ সরিষাবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা