× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাঁকখালী ও মাতামুহুরি

নদীর বুকে তামাকের আগ্রাসন

চকরিয়া ও রামু (কক্সবাজার) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫৯ পিএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৬ পিএম

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে ক্ষতিকর তামাক। সম্প্রতি রামু উপজেলার রাজারকুল এলাকা। প্রবা ফটো

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে ক্ষতিকর তামাক। সম্প্রতি রামু উপজেলার রাজারকুল এলাকা। প্রবা ফটো

পর্যটন জেলা কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান দুই নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরির বুকে চলছে তামাকের আগ্রাসন। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে ক্ষতিকর তামাক। শুধু তীর ঘেঁষেই নয়, আশেপাশের জমিতেও বড় পরিসরে চলে তামাকের আবাদ। অথচ একসময় নদী দুটির তীর সবুজ শাক-সবজিতে ভরপুর থাকত। কিন্তু কোম্পানির লোভের ফাঁদে পড়ে প্রান্তিক চাষিরা সেসব জায়গায় স্থান দিয়েছে তামাকের।

জানা যায়, জেলার মধ্যে মোট নদীর সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুই নদীর পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে তামাকের অবাধ চাষে। জমিতে ব্যবহার করা ক্ষতিকর বিষ ও কীটনাশকে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া তামাক পোড়াতে আশপাশের সংরক্ষিত বন থেকে নেওয়া হচ্ছে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার কাঠ। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে চাষিদের বিকল্প চাষাবাদে প্রণোদনা দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

রামু ও চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রামুতে ১৭০ হেক্টরের অধিক ও চকরিয়ায় ৬২০ হেক্টরের অধিক জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে এই দুটি নদীর তীরে করা তামাক চাষের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রামু উপজেলার রাজারকুল, মৈষকুম, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার নাপিতেরচর, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল, ফাক্রিকাটা এলাকায় বাঁকখালীর নদীর বুকে ও জেগে ওঠা চরে শুধুই তামাকের আবাদ। পাশাপাশি এলাকার ফসলি জমিগুলোও তামাকের দখলে। 

একই চিত্র চকরিয়ায়ও। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে তামাক আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়েছে বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নে। বিশেষ করে বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর মানিকপুর ও কাকারা, ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীতে জেগে ওঠা চর, নদী তীরবর্তী জমিতেও তামাক চাষ দেখা গেছে। অথচ নদীবেষ্টিত এসব এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তামাক চাষ না করতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড দেখা গেছে। 

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এর ধারা ৫ ও ১১-তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে তামাকজাত দ্রব্যের পৃষ্ঠপোষকতা ও তামাকজাতীয় ফসল উৎপাদন, ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো এসবের কিছুই মানছে না। তামাক চাষ প্রসারে উল্টো প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষকদের।

কাউয়ারখোপে কৃষক মো. আবদুস ছোবহান ৭ কানি জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তিনি জানান, একরপ্রতি ১০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে কোম্পানি। পাশাপাশি বীজ, সার ও পোকা দমনে বিশেষ ধরনের বিষও দিয়েছে কোম্পানিটি।

কচ্ছপিয়া নাপিতেরচর কৃষক আবুল কালাম বলেন, তামাক চাষে মোটা টাকা পাওয়া যায়। তা ছাড়া তামাক কোম্পানি সুদমুক্ত ঋণ দেয়। শীতকালীন শাক-সবজির দাম না পাওয়ায় অনেকেই তামাক চাষে ঝুঁকছেন।

নদীর বুকে ও তীরে তামাক চাষের ফলে কী ক্ষতি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘তামাক চাষের ফলে আমাদের প্রতিবেশগত ক্ষতিটা হবে বেশি। দিন দিন এই চাষ বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদনমুখী কৃষি ও ভয়াবহ কীটনাশক ব্যবহারে নদীর পানি ও মাছের স্থায়ী ক্ষতি হবে, যা অপূরণীয়।’

সূত্র মতে, ৪০ শতক জমির তামাক পোড়াতে ৫০ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এ বছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত তামাক পোড়াতে প্রায় ১০ হাজার টনের বেশি লাকড়ির প্রয়োজন হবে। যার অধিকাংশ আসে টেকনাফ, ফাঁসিয়াখালী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনাঞ্চল থেকে।

চকরিয়ার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই ইউনিয়নে তামাক চাষ হচ্ছে। এর আগে তামাক চাষ বন্ধে চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু তামাক কোম্পানির লোভের ফাঁদে পড়ে প্রান্তিক চাষিরা তামাক চাষ বাদ দিতে পারছে না। যদি তামাক চাষ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলেই এটা থামানো সম্ভব হতো।

উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, তামাক চাষের কারণে যেমন জমির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে, তেমনি চাষি ও পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের বহু মানুষ প্রতি বছর নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া তামাক শোধন করতে গিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান বলেন, নদীতে জেগে ওঠা চর ও নদী তীরবর্তী খাস জমিতে তামাক আবাদ করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। খাস জমিতে কোনো অবস্থাতেই তামাক চাষ করতে দেওয়া হবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা