শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ১০:০২ এএম
ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় পরিবহন ও পোশাক শ্রমিক দম্পতির ঘরে তালা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রবা ফটো
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় পরিবহন ও পোশাক শ্রমিক দম্পতির ঘরে তালা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরে ঢুকতে না পেরে তিন সন্তান নিয়ে ঘরের দরজার সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া (ফকির বাড়ি জামে মসজিদ) এলাকায়। গত বুধবার বিকালে স্থানীয় আম্বালা ফাউন্ডেশন ওই দম্পতির ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়।
আলা উদ্দিন বাসের সুপারভাইজার এবং তার স্ত্রী ঋণগ্রহীতা শামীমা আক্তার স্থানীয় পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দেওয়ানিবাড়ি গ্রামে। প্রায় দেড় যুগ আগে শামীমার শ্বশুর আবুল বাশার শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। শামীমা পাশের পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন। সম্প্রতি ওই কারখানা থেকে তার চাকরি চলে যায়। তার স্বামী আলা উদ্দিন একটি পরিবহনের (বাসের) সুপারভাইজার। তাদের তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে।
শামীম আক্তার জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময় আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখা থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই ঋণের বিপরীতে তাকে প্রতি মাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। নিয়মিত তা পরিশোধ করে আসছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে চাকরি চলে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, হাসপাতালে শাশুড়ির চিকিৎসা চালিয়ে তার স্বামীর পক্ষেও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
শামীম আক্তার বলেন, তারা (আম্বালা ফাউন্ডেশন) আমাকে ৩২ হাজার টাকা মূল্যের একটি সেলাই মেশিন ধরিয়ে দেয়। সেলাই মেশিন নিতে না চাইলে ঋণ দেওয়া হবে না বলে জানায়। ঋণ ও যাবতীয় খরচসহ সঞ্চয় বাদে আমাকে এক লাখ টাকা না দিয়ে ৫৮ হাজার টাকা দেয়। প্রতি মাসে যথা নিয়মে কিস্তি পরিশোধ করে আসছি। ফেব্রুয়ারি মাসের কিস্তি বকেয়া থাকায় অফিসের লোকজন ঘরে তালা দিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানায় কিস্তির টাকা জমা না দেওয়ায় এনজিও কর্মীরা ঘরে তালা দিয়েছে।
আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণের কিস্তি শামীমা আক্তার সঠিক সময়ে পরিশোধ করছিল না। কিস্তি দেওয়ার সময় প্রতি মাসেই পাঁচশ এক হাজার টাকা কম দিত। কিস্তির টাকা আনার জন্য মাঠকর্মী বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা খোলা থাকলেও শামীমাকে বাসায় পায়নি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও না এলে জামিনদারকে ডেকে তার উপস্থিতিতে ঘরে তালা দিয়েছি।’
ফাউন্ডেশনের এরিয়া ম্যানেজার টিটু চক্রবর্তী বলেন, ‘কিস্তি দেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে চলে যায় ঋণগ্রহীতা। ঘরে তালা লাগানোর কোনো নিয়ম নেই। এটা পরিস্থিতির কারণে হয়েছে।’
শ্রীপুর থানার ওসি শাহ জামান বলেন, ‘কিস্তি না দেওয়ায় ঋণগ্রহীতার ঘরে তালা দেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখা হবে।’