ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৩ পিএম
আকুয়া বাইপাস এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি এলাকায় এখন ভোট উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। এবার নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার নেতা। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগাতে চান জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ভোট হবে আগামী ৯ মার্চ। বিএনপি অংশ না নিলেও, দলীয় প্রতীক না থাকায় মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের চার নেতা। তাদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক। এ কারণে ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে ত্রিমুখী শক্ত লড়াইয়ের আভাস। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সবাই। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল। জয় পাওয়ার আশায় সকাল-সন্ধ্যা লাঙ্গল প্রতীকের গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি।
ভোটাররা বলছেন, নাগরিক সমস্যা সমাধান ও নগরের উন্নয়নকে যিনি এগিয়ে নিতে পারবেন তাকেই ভোট দেবেন। শুধু আশ্বাসে নয়, বিশ্বস্ত এবং যোগ্য প্রার্থী দেখেই ভোট দেবেন তারা। নগরীর বলাশপুর এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৮ এবং ১৯ নং ওয়ার্ড অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়। গত বর্ষায় টানা ১৫ দিন পানিবন্দি ছিলেন তারা। নোংরা পানিতে অসুস্থ হয়েছেন অনেকেই। আমাদের এই দুর্ভোগ যিনি দূর করতে পারবেন তাকেই আমরা ভোট দেব।
ধোপাখোলা এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ খান বলেন, এই শহরের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি কারণ যানজট। সরু রাস্তায় ক্ষণে ক্ষণে যানজটে হয়। ১০ মিনিটের রাস্তায় কখনো এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। নগরের এসব দুর্দশা যিনি লাঘব করবেন তাকেই ভোট দিতে চাই।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররা। দুপুরে আকুয়া বাইপাস এলাকায় ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, আমি সব সময় নগরবাসীর পাশে ছিলাম। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছি। যে কারণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সম্পর্ক থেকেই তারা আমাকে বেছে নিবে বলে বিশ্বাস করি।
ডিবি রোড এলাকায় সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু হাতি প্রতীকের প্রচারণা চালান। টজু বলেন, পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত নগরী গড়তে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি জয়ী হলে সুন্দর একটি নগরী গড়ে তুলব। সেজন্য নগরবাসী আমাকেই বেছে নেবেন বলে আমি আশাবাদী।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলম সকালে গুলকিবাড়ী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সব এলাকাতেই ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীরকে যানজটমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দর এবং স্মার্ট শহর উপহার দিতেই চাই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি বলয় থাকায় টিটুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে আলোচনায় রয়েছেন এহতেশামুল ও টজু। টিটুকে ঠেকাতে তারা দুইজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থনের আশায় আছেন। তবে এমপি শান্ত এখনো প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন না দিলেও মেয়র প্রার্থী টজু দাবি করেছেন, তার প্রতি এমপি শান্তর মৌন সমর্থন রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে সুযোগ নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল। তিনি বিকেলে মদনবাবু রোড, গঙ্গাদাস গুহ রোড এবং পণ্ডিতপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারজন, সেহেতু তাদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হবে। সদর আসন থেকে রওশন এরশাদ পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এখানে জাতীয় পার্টির বড় ভোটব্যাংক রয়েছে। এতে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। স্বপন মণ্ডল আরও বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে ঘিঞ্জি শহর থেকে আমি মানুষকে মুক্তি দিতে উপশহর করব। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নগর উন্নয়নে কাজ করব।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন।