সিটি করপোরেশন নির্বাচন
তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৮ এএম
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের প্রচারণার একটি উঠান বৈঠক। প্রবা ফটো
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ও তার আগের দিন প্রায় সব মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রার্থীরাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে পারছেন বলে তাদের ধারণা।
বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, জীবনে বহুবার বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছি। মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীরে আমার বাবার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি। এই প্রথমবারের মতো নিজের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে বুঝতে পারলাম, তাদের হৃদয়ের গভীরতম অংশে আমিও বিচরণ করি। নিজেকে সত্যিই খুব ভাগ্যবান মনে হয়। সম্ভবত একজন মানুষ হিসেবে এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও আশাবাদী। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে হিসাব করে দেখলাম, ৯৮৭ ভোটে আমি বিজয়ী। কিন্তু ওপরের ইশারায় ফল আমার বিপক্ষে গেছে। তার পরও বলব, এটা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। আমি মাথা নত করে পরাজয় মেনে নিয়েছি। আমি কুমিল্লার মানুষকে খুব ভালোবাসি। আশা করি, আপনারা আমার ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন।
তবে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন দুই প্রার্থী। হাতি প্রতীকের নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, তিনি তার মেয়ে মেয়র প্রার্থী সূচনাকে নিয়ে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মাননীয় সংসদ সদস্যের মতো একজন প্রভাবশালী লোক যদি এমন কাণ্ড করেন, প্রশাসনের তখন কিছুই করার থাকে না। কারণ নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও তাদের কুমিল্লায় চাকরি করতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করব।
ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সারও অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড শক্ত এটা প্রমাণ করতে হবে। একজন সংসদ সদস্য কীভাবে এমন প্রচারণা চালান? তিনি বিধি লঙ্ঘন করেছেন। কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে জনগণ আস্থা হারাবে। তিন বলেন, কুমিল্লার মানুষ জিম্মি। তারা এ দশা থেকে মুক্তি চান। অনেকে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু জনগণ এখন আর ভয় পায় না।
বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় এবং নির্বাচনের গেলে নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করায় এর আগের নির্বাচনগুলোয় ভোটের মাঠ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন; আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের একচেটিয়া দখলে। কিন্তু এ উপনির্বাচনে বিএনপি কথা বলছে না। উপনির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুই প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল না থাকায় ওই নির্বাচনে বিএনপি কর্মীরা ভয়ে ভয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এবারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কাজ করলেও বিএনপি চুপ রয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম ২০১২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এরপর মনোনয়ন চাইলেও গত দুই নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। এ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন দেয়নি। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশের সমর্থন পেয়েছেন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তার পক্ষে কাজ করছেন। বিএনপির নমনীয়তা, ভোটে না থেকেও কাউন্সিলরদের সক্রিয়তা এবং শক্ত চার প্রার্থীর কারণে নির্বাচন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে ভোটাররা মনে করছেন। ভোট নিয়ে কুমিল্লা নগরীর মানুষের আগ্রহ ও উঠান বৈঠকগুলোতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও অনেক ভোটার এবং প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ঠিক থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
২০২২ সালে এ সিটির তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে এবার। নির্বাচন ৯ মার্চ ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮।