রায়পুরায় প্রসূতির অভিযোগ
নরসিংদী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩০ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫২ পিএম
নরসিংদীর রায়পুরায় সাবিকুন্নাহার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান প্রসবের সময় ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটেছে।
সাবিকুন্নাহারের ভাই মিজান মিয়া অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা সাবিকুন্নাহারকে পরিবারের লোকজন রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সাবিকুন্নাহার ও তার গর্ভের বাচ্চা সুস্থ আছে বলেও জানান। এ সময় আমরা রোগীকে সিজার ডেলিভারি করানোর কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা প্রসব হবে বলে জানায়। সকাল হলে ব্যথা তীব্র হওয়ায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক ও নার্স মৃত বাচ্চা হস্তান্তর করে জানান, সাবিকুন্নাহারের মৃত বাচ্চা হয়েছে। এ ছাড়া ডেলিভারির পর রোগীকে ট্রলিতে না নিয়ে হাঁটিয়ে বেডে নেওয়া হয়। তখন প্রসূতির অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমরা ট্রলির কথা বলি। তখন নার্সরা বলেন, নরমাল ডেলিভারিতে ট্রলি ব্যবহার করা হয় না। পরে কথা-কাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে সেখানকার একজন আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়। আমার স্বজনরা আমাকে ছাড়িয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, ওটিতে থাকা অবস্থায় আমার বোনকে এক নার্স থাপ্পড়ও মারে। আমরা বিষয়টা জানতে পেরে জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে।
সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘রাতে ভর্তি করানোর পর আমাকে একটা ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরবর্তীতে বলা হয়, ভোরে তারা আমাকে স্যালাইন দেবে। ভোরে স্যালাইন দেওয়ার জন্য ডাকলে তারা আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সকালে যখন ব্যথা বাড়ার পর আমাকে ওটিতে নেওয়া হয়, তখন একজন আমার পেটের দিকে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকে। তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা হয়। একপর্যায়ে আমি তার হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে থাকা একজন আমাকে থাপ্পড় মারে। পরে আরেকজন বারবারই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, বাচ্চা নড়াচড়া করছে কি না। তখন আমি তাদের বাচ্চা নড়াচড়া করে বলে জানাই। পরে আমাকে থাপ্পড় মারা মহিলা আমার পেটে জোরে চাপ প্রয়োগ করে। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এখন বাচ্চা নড়ে কি না। তখন আমি বলি, এখন তো তেমন কিছু বুঝতেছি না। তবে একটু আগেও নড়ছিল। তখন ওটিতে থাকা আরেকজন তাকে চাপ দিতে মানা করে। তারপরও তিনি পেটে চাপ প্রয়োগ করেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকেন। পেটে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে আমার বাচ্চা মারা গেছে।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জেসমিন বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মেই বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা হওয়ার পর কাঁদে নাই এবং কোনো শ্বাস-প্রশ্বাসও নেয়নি। তাই বাচ্চাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।’ ওটিতে রোগীকে থাপ্পড় মারার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তাদের বাচ্চা মারা গেছে। তারা কত কথাই বলবে। তবে থাপ্পড় মারা বা খারাপ ব্যাবহার—এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ নূরউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।