নুপা আলম, ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২০ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৫ পিএম
শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তোলা। প্রবা ফটো
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা– মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের আঁচ লেগে এমন পরিস্থিত সৃষ্টি হয়েছে এপারের সীমান্তবর্তী এলাকায়। সব কিছু বিবেচনায় বন্ধ করে দেওয়া হয় বান্দরবানের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেণিকক্ষের পাঠ থেকে ২৩ দিন বঞ্চিত ছিল জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ঘেঁষা স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাঁধভাঙা উল্লাস সঙ্গী করে আবার তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সবকটি স্কুল প্রাঙ্গণ।
তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরুল হাসনাত তাসিনের সঙ্গে। সে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছে, ‘ক্লাসে এসেছি, ক্লাস করছি। অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হচ্ছে। খুবই ভাল লাগছে।’
একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মো. ইমরান হোসেন ইমু বলেছে, ‘এই কয়দিনে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এটা কীভাবে পূরণ হবে জানি না।’
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চন শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মিজান বলেছে, ‘স্কুল খুলেছে খুবই খুশি লাগছে। তারপরও কিছুটা ভয় আছে। এখন কোনো কিছুর বিকট শব্দ হলেই মনে হয় মিয়ানমার থেকে গুলি করছে।’
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে। এর রেশ পড়ে এপারে বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত এলাকায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত ঘেঁষা পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। সীমান্তের পরিস্থিতি বিবেচনায় স্কুলগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।
স্কুলগুলো হলো বাইশপারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সীমান্ত এলাকায় মাঝে-মধ্যে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসায় স্কুল খুললেও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে কঠিন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছেন শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘টানা ২৩ দিন স্কুল বন্ধ ছিল। আবার স্কুল খুলেছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। তবে এই কয়দিনে শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বই থেকে বিরত ছিল। নানা উপায়ে ও অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে হবে।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘স্কুলগুলো খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ হয়নি। এলাকার অনেকেই এখনও নিজ বসতিতে ফেরেননি। তাদের সন্তানরা স্কুলে ফিরতে পারেনি। আশা করা যায় ২-৩ দিনের মধ্যে শতভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরবে।’