ভোলা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৯ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫২ পিএম
নীতিমালার অভাবে ভোলায় বন্ধের পথে শত কোটি টাকার চেওয়া শুঁটকি ব্যবসা। আর এটি বন্ধ হলে কর্মহীন হয়ে পড়বে কয়েক হাজার জেলে, শ্রমিকসহ আড়তদার। তারা জানান, ভোলার কয়েকটি পয়েন্টে মেঘনা নদীর অতিরিক্ত লবণাক্ত পানিতে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে চেওয়া মাছ। কিন্তু সরকারিভাবে চেওয়া শিকারের জালের কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রশাসনের তোপের মুখে আগ্রহ হারিয়েছেন জেলেরা। তবে সরকারিভাবে নীতিমালা করে জাল নির্ধারণ করে দিলে আবারও সুদিন ফিরে আসবে বলে জানান তারা।
জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার মেঘনা নদীর লবণাক্ত পানিতে চেওয়া মাছের এখন ভরা মৌসুম। কিন্তু চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর পাতিলা, কুকড়ি-মুকড়ি, ঢালচর, মনপুরা উপজেলার চর নিজামসহ বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি পল্লীগুলোয় চলছে চেওয়া মাছের হাহাকার। আগে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি চেওয়া মাছ রোদে শুকানো হতো, ব্যস্ত সময় পার করতেন শুঁটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ বছর সেই দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছে না।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. হারুন, আব্দুল মন্নান, আড়তদার মো. খোকন, বাদশা মিয়াসহ কয়েকজন জানান, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন শুঁটকি পল্লী থেকে থেকে প্রায় শতকোটি টাকার চেওয়া মাছের শুঁটকি দেশের বিভিন্ন আড়ত ও মুরগি, মাছের খাবার বা ফিড তৈরি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। এবার তা আর হচ্ছে না। কারণ চেওয়া মাছ শিকারের জালের সরকারি নীতিমালা না থাকায় বর্তমানে মাছ ধরা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন জেলেরা। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। এ ছাড়াও চলতি মৌসুমের আগে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি আড়ত থেকে এনে জেলেদের দাদন দিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।
চর পাতিলার জেলে শাহিন মাঝি, সিদ্দিক মাঝি, ফিরোজ মাঝি, মনির হোসেন মাঝি, লিটন মাঝিসহ কয়েকজন জানান, বর্তমানে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার মেঘনা নদীর কিছু পয়েন্টে অতি লবণাক্ত পানিতে চেওয়া মাছের ভরা মৌসুম চলছে। এখন ওই এলাকাগুলোতে জাল ফেললেই প্রচুর চেওয়া মাছ উঠে আসে। এ সময় প্রতিদিন ৪০/৫০ হাজার টাকার মাছ ধরা সম্ভব। কিন্তু চেওয়া মাছ শিকারের একমাত্র জাল বেহেন্দি জালটি সরকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরলেও এ বছর অভিযান কঠোর হওয়ায় অনেক জেলেই চেওয়া মাছ ধরতে যাচ্ছে না। তারাও চায় না আর লুকিয়ে চেওয়া মাছ ধরতে। সরকার যদি তাদের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় বেহেন্দি জাল দিয়ে চেওয়া মাছ ধরতে দিত বা চেওয়া মাছ ধরার কোনো জাল যদি দেয় তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। ইলিশ মূলত ৬ মাস পর্যন্ত মিঠা পানিতে থাকে। আর এগুলো তো লবণাক্ত পানিতে থাকে না। এ ছাড়াও ওই পয়েন্টেগুলোতে শুধু চেওয়া মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছের পোনা ধরা পড়ে না বলেও দাবি তাদের।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকড়ি-মুমড়ি, চর পাতিলা, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন শুঁটকিপল্লী থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চেওয়া মাছের শুঁটকি সারা দেশের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। চেওয়া মাছের শুঁটকিতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকায় এটি দিয়ে তৈরি হয় মুরগি, মাছ ও গরুর খাবার বা ফিড। চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, হাজারনপুর, হাজারিগঞ্জ ও মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ও চর নিজাম এলাকার মেঘনা নদীর পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ায় সেখানে ইলিশ বিচরণ করে না। বিষয়টি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে গুরুত্ব সহকারে অবহিত করা হবে।’