প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২২ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪২ পিএম
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর শিবনগর চক কড়েয়া গ্রামে বন্ধ পড়ে থাকা হাসকিং মিল-চাতালের চিমনিতে ধরেছে জং। প্রবা ফটো
একসময় ধান সংগ্রহের পর চাতালে শুকিয়ে হতো চাল প্রক্রিয়ার কাজ। এগুলোকে বলা হতো হাসকিং মিল বা চাতাল। শুধু চাল-ই নয়, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বহু শস্য শুকানো হতো চাতালে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান ও চালের মূল্য এবং অটো রাইস মিলের কারণে লোকসানে পড়ে চাতালগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। তাই চাতাল ভেঙে কেউ কেউ গড়ে তুলছেন বাসা-বাড়ি, দোকানপাট। আবার কেউ কেউ গড়ে তুলছেন গরুসহ হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়ার খামার। এমন চিত্র দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলাজুড়ে। চাতাল ব্যবসায় দুর্দিন চলায় মালিকরা ব্যবসা বদলাচ্ছেন।
চাতাল মালিকরা জানান, আশির দশকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাসকিং মিল-চাতাল তৈরি করে চালের ব্যবসা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে ১৩৯টি চালকল। এর মধ্যে ১০টি অটোমেটিক রাইস মিলও রয়েছে। চাতালগুলোতে উৎপাদিত চাল এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এসব চাতালের মালিক ছিলেন। কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু আধুনিকতার উৎকর্ষে অটো রাইস মিলের দাপটে বাজারে টিকতে না পারার কারণে পুঁজি হারানোর আতঙ্কে সেই সুদিন এখন দুর্দিনে পরিণত হতে চলেছে। অনেকে এই ব্যবসায় অধিক পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করে হতাশ হয়ে এখন অন্য পেশার দিকে যাচ্ছেন।
উপজেলার নলপুকুর এলাকার কেডি রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, বাজার থেকে ধান কিনে চাল বানিয়ে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসানের ঘানি টানতে ব্যবসা শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তৈরি চাল আর অটো রাইস মিলের চালের দর প্রকারভেদে প্রতি মণে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশি। অথচ বাজার থেকে ধান কেনার সময় প্রায় একই দরে কেনাকাটা হয়।
উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ হাসকিং মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক চালকল মালিক। এর মূল কারণ অটো রাইস মিলের প্রাধান্য। ৩০০টি হাসকিং মিলের সমান কাজ করে একেকটি অটো রাইস মিল। বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে সচল করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ বরাদ্দ ও ভর্তুকির মাধ্যমে মিলগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মঈন উদ্দিন বলেন, উপজেলায় খাদ্য বিভাগের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৩৯টি চালকলের মধ্যে হাসকিং ১২৯টি এবং অটো রাইস মিল ১০টি। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাত্র ৯০ জন চালকল মালিক। অটো রাইস মিলের চালের মানের সঙ্গে হাসকিং মিলের তৈরি চাল কিছুটা নিম্নমানের হওয়ায় চলমান বাজারে টিকতে পারছে না। কিন্তু যারা হাসকিং চাতাল মিল ব্যবসায়ী আছে, বর্তমান ধানের বাজার মূল্যের সঙ্গে চালের দাম সমন্বয়হীনতার কারণে তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান দেখা দেয়।