× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনলাইনে পণ্য বিক্রি

টাঙ্গাইলে নারী উদ্যোক্তাদের দিনবদল

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪২ এএম

টাঙ্গাইলে প্রায় ২২০ জন নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন

টাঙ্গাইলে প্রায় ২২০ জন নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন

টাঙ্গাইল জেলায় অনলাইনভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। তিন-চার বছর ধরে পোশাক, আচার, কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, অর্গানিক অয়েল, কসমেটিকস, জুয়েলারি, কাঁসা-পিতল, মাটি ও পাটের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা পণ্যের ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

অনেক নারীই আগ্রহী হয়ে উঠছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট ফোরাম (উই) ফেসবুক-ভিত্তিক পেজে যুক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য। এতে ঘরে বসেই পরিবারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন নারীরা। অল্প পুঁজিতে নারীরা অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেরা সফলও হয়েছেন। মাসে কেউ কেউ ৮০ হাজার বা এক লাখ টাকা আয় করছেন। জেলায় দুই শতাধিক নারী উদ্যোক্তা এমনিভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে।

অনলাইনে খাদ্যপণ্য ও পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অনলাইনে অর্ডারের পর নির্ধারিত সময়ে ক্রেতার পছন্দনীয় পণ্য দরজায় পৌঁছে যায়। করোনাকালে অনেক নারীই ঘরে বসে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। যেসব নারী কিছু করতে চান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তাদের জন্য দারুণ সুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলার সখীপুর উপজেলার নারী উদ্যোক্তা সানজিদা আহমেদ জুঁই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে জেলা ও জেলার বাইরে বেশ পরিচিত রয়েছে। জুঁই বলেন, আমার চিন্তা ছিল অন্যের অধীনে কাজ না করে নিজে নিজে কিছু একটা করব, অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। ২০২০ সালের দিকে করোনা এলো, ঘরে বসে থেকে আর ভালো লাগে না। পরে ফেসবুক গ্রুপ  উই-এর খোঁজ পেলাম। মাথায় চিন্তা এলো কী নিয়ে কাজ করা যায়। স্বামী ও বাবা-মায়ের পরামর্শে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে কাঁথাসহ বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে  রুহির মম নামে একটি ফেসবুক পেজ খুললাম। প্রথম দিনই অর্ডার এলো, তাও আবার অন্য জেলা থেকে। প্রথম বিক্রি ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। আরও কাজের প্রতি উৎসাহী হলাম। এরপর থেকে শুরু হলো কাজ করা। 

তিনি বলেন, অনলাইনে ৯৫ ভাগ বিক্রি হয় আর ৫ ভাগ অফলাইনে বিক্রি হয়। প্রতিমাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। লাভ থাকে ৩০-৪০ হাজার টাকার মতো। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন নারীকর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার এক মেয়ে ও সংসারের সময় দেওয়ার পর বাকি সময়টুকু ফেসবুকে দেই। 

জুঁই আরও বলেন, আমি নকশিকাঁথা, সরিষার বালিশ, শিমুল তুলার বালিশ, ফ্যামেলি কম্বো ড্রেস, পাটের ব্যাগ, হাতের কাজের জুয়েলারিসহ বিভিন্ন রকমের পণ্য নিয়ে কাজ করি। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিসিক থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছি স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা গ্রান্ট। সরকার থেকে ৫০ হাজার টাকার সহযোগিতা করেছে। তবে অনলাইনে নারীদের ব্যবসার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে অসংখ্য নারীর

পৌর শহরের পশ্চিম আকুরটাকুরপাড়া এলাকার নারী উদ্যোক্তা নাহিদা ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের দিকে পোশাক নিয়ে কাজ করে ভালোই চলছিল। তারপর বাচ্চা হলো তখন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ঘরে বসে থাকতে লো লাগছিল না। তখন আমার স্বামী ও আমার ননদ বলে তোমার রান্না অনেক ভালো। খাবার নিয়ে শুরু করো। দুই বছর ধরে অনলাইনে বিভিন্ন খাদ্যেপণ্যের ব্যবসা করেছি। 

তিনি বলেন, দুই বছর আগে করোনার মধ্যে অনেকের দেখাদেখি আমিও অনলাইনে যুক্ত হয়ে জোড়ালোভাবে ব্যবসা শুরু করলাম। বর্তমানে সংসারে কাজের ফাঁকে আমি সব ধরনের বাংলা খাবার, চিকেন ফ্রাই, বিফ কারি, ভেজিটেবলস, সালাদ, বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি, পোলাও, শর্মাসহ অর্ডার মোতাবেক বিভিন্ন মজাদার খাবার তৈরি করি। 

তিনি আরও বলেন, কাজ করতে পারলে প্রতিমাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা বেশি প্রয়োজন।

অর্গানিক প্রোডাক্ট বিডির স্বত্বাধিকারী ও কলেজছাত্রী ঋতু বর্ণা বলেন, তিন বছর ধরে লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইনে অর্গানিক হেয়ার অয়েল, অর্গানিক হেয়ার প্যাক, অর্গানিক ক্রিম, অর্গানিক বডি লোশন ও ঝালমুড়ির মসলার ব্যবসা করছি। ভালোই সাড়া পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইন থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে। বর্তমানে আমার মতো অনেক ছাত্রী অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। আমাদের যদি সরকারিভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারব। 

উইর টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি ও ‘স্বপ্নের সন্ধানে’ স্বত্বাধিকারী মাহবুবা খান জ্যোতি জানান, বাসার জন্য তৈরি আচার ফেসবুকে দেন। সেখান থেকে অর্ডার পান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জ্যোতির। জ্যোতি মাত্র ২৬০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন প্রতিমাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন। বর্তমানে বিক্রি করছেন ঘরে তৈরি  কেক, আচার, হাতে তৈরি ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের ফতুয়া। 

জ্যোতি বলেন, আমাদের দেশের মেয়েরা বিয়ের পর সেভাবে এখনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না, এমন ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজ আমি একজন সফল নারী। ঘরে বসেই আয় হচ্ছে প্রায় লাখ টাকা। 

তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইলে প্রায় ২২০ জন নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন। বিসিক থেকে আমাদের ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। 

জেলা বিসিক কার্যালয়ের শিল্পনগরী কর্মকর্তা জামিল হুসাইন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দিন দিন টাঙ্গাইলে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে। নারীরা অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের বিসিক থেকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এ ছাড়াও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করানো হয়। যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের আমরা উৎসাহিত করি।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা