মাদারীপুরের কালকিনি
মাদারীপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২২ পিএম
মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর পাশে এমপির স্বজনদের অবৈধ স্থাপনা। প্রবা ফটো
রাতারাতি নিত্যনতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে মাদারীপুরের কালকিনিতে। সেখানে থানার উত্তর পাশে পালরদী নদীর পাড়ে সরকারি ফুটপাথ দখল করে স্থাপনা তৈরি শুরু করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের আত্মীয়স্বজন ও সুবিধাভোগীরা। অবশ্য দখলদার স্থাপনা নির্মাণকারীরা বলছেন, তারা তাদের মালিকানাধীন জায়গাতে স্থাপনা তুলছেন এবং উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েই এসব নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, এসব অবৈধ স্থাপনা দ্রুতই উচ্ছেদ করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত এমপি তাহমিনা বেগম জানান, তিনি বা তার স্বজনরা কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ জানিয়েছেন, তার সময়ে এরকম দখলের ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিনে যা দেখা গেছে
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালকিনি পুরান বাজার পালরদী নদীর তীর ও তীরে থাকা ফুটপাথ দখল করে অনেকগুলো অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগমের চাচাতো ভাই, ভাতিজাসহ একাধিক আত্মীয়স্বজন নদীর পাড়ে ও ফুটপাথ জুড়ে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে যুক্ত। দখল করে ইতোমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে স্থানীয় এমপির চাচাতো ভাই নুরুজ্জামান সরদারের চারটি দোকান (আট শাটার), আরেক চাচাতো ভাই শাহাদাত সরদারের একটি, শহীদ সরদারের তিনটি এবং ভাগ্নে হেমায়েত, টিটু সরদার ও উজ্জ্বল সরদারের একটি করে স্থাপনা। তাদের দেখাদেখি রশিদ বেপারী ও আকবর বেপারীও একটি করে ঘর নির্মাণ করেছেন। এভাবে আরও কয়েক দখলদার ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ বলছেন, নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্লোগান ছিল ভূমিদস্যু, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু বর্তমানে তারা ক্ষমতা হাতে পেয়েই অবস্থান পাল্টে ফেলেছেন। নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তারা যে ক্ষমতা অর্জন করেছেন, তা খাটিয়ে তারা রাতারাতি একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করছেন। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নির্মাণের তোড়ে পথচারীদের হাঁটার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ পথচারীরা। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এসব অবৈধ স্থাপনা অচিরেই বৈধ হিসেবে পরিগণিত হতে শুরু করবে। অন্যদিকে পালরদী ক্রমেই পরিণত হবে মৃত নদীতে।
এ বিষয়ে এমপির চাচাতো ভাই নুরুজ্জামান সরদার বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনকে দেখিয়েই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।’ ফুটপাথ দখল করে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে এ প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর দেননি তিনি।
যা বলছেন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা
এ বিষয়ে কালকিনির সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কায়েসুর রহমান বলেন, ‘এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ সম্পর্কে খবর পেয়েছি। এসব স্থাপনার তালিকা করা হচ্ছে। অল্প দিনের মধ্যেই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা প্রশাসন এসবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। এর আগেও আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি।’
এ বিষয়ে কালকিনি পৌর মেয়র এস এম হানিফ বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করছে নতুন এমপির সহযোগীরা। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার বিষয়ে আমি অসহায়। তবে চেষ্টা করছি, যাতে অবৈধ স্থাপনাগুলো না থাকে। অবশ্য এমপির সদিচ্ছা না থাকলে সেটি সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে সাবেক এমপি ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ বলেন, ‘কালকিনিবাসী চোখের সামনে এসব স্বজনপ্রীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছে, তারা ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতেই এসব করেছে। একদিন কালকিনিবাসী বুঝতে পারবে তাদের আসল উদ্দেশ্য।’
এ বিষয়ে বর্তমান এমপি তাহমিনা বেগম বলেন, ‘এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব প্রশাসনের। আমি তাদের উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিইনি, দেবও না। প্রশাসনকে বলব উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিন।’