× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়ন চায় মাঠপুলিশ

সাইফ বাবলু

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭ এএম

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে নতুন অপরাধ। চুরি, ডাকাতি ও টার্গেট কিলিংয়ের পাশাপাশি দেশে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা চালুর প্রত্যয় থাকলেও সাধারণ মানুষ এখনও থানা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগের প্রতিকার সময়মতো পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষকে হয়রানি, ব্যক্তিগত অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া, মামলায় পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের মাঠপর্যায়ের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও তদন্তে পুলিশের পূর্ণ পেশাদারত্ব এবং জনমুখী পুলিশিংয়ের জন্য স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় পুলিশ সদর দপ্তর। 

পুলিশ সদর দপ্তর স্মার্ট পুলিশিংয়ের জন্য একটি কারিকুলাম ও মডিউল তৈরি করেছে। সেই আলোকে পুলিশ স্টাফ কলেজসহ পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্মার্ট পুলিশিং কীভাবে পরিচালনা করবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাই এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল স্লোগান রাখা হয়েছে ‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ।’

পুলিশের নীতিনির্ধারকদের আশা, স্মার্ট পুলিশিং সফল হলে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ ও চাঞ্চল্যকর অপরাধের ক্লু দ্রুত উদঘাটন হবে। সাধারণ মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে। পুলিশের আচরণেও আসবে পরিবর্তন। গড়ে উঠবে জনবান্ধব পুলিশিং। তবে মাঠপুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্ট পুলিশিংয়ের জন্য পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট, প্রশিক্ষিত জনবল বৃদ্ধি না করলে মানুষকে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া কঠিন হবে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, স্মার্ট পুলিশিংয়ের জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্ট (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও জরুরি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে পুলিশ সদস্যরা অভিযান, তদন্ত কার্যক্রম এবং মানুষকে আইনি সেবা দিতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো ‘প্রেডিক্টিভ পুলিশিং’, যা স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায়; যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বয়ংক্রিয়, দ্রুতগতিসম্পন্ন ও তুলনামূলক নির্ভুল ব্যবস্থাপনা। অপরাধ ও অপরাধীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে অপরাধ-প্রতিরোধ, বিশ্লেষণ ও প্রতিকারে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। যেমন সিসি ক্যামেরা, সেন্সর ডিভাইস, পূর্বে তৈরিকৃত ডেটাবেজের তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে। আইন প্রয়োগে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে এআই সংযোজন একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা জননিরাপত্তা, ফোর্স মোবিলাইজেশন, রিসোর্স অ্যালোকেশন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম তথ্য প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

অপরাধ বিষয়ে পর্যালোচনাকারী একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের বড় সুবিধা হলো প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইসিস। তথ্যভান্ডারের স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমাধান পদ্ধতি কিছু ঘটনা ও অপরাধের লক্ষণ শনাক্ত করতে সক্ষম, যা মানুষের পর্যালোচনা শক্তি দ্বারা অসম্ভব। এই পূর্ব শনাক্তকরণ সক্ষমতা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই অপরাধ দমনে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে এআই অপরাধীর আচরণ বিশ্লেষণ করে অপরাধপ্রবণ অঞ্চল, অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী রিসোর্স মোবিলাইজেশন ও সক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্রিমিনাল ট্র্যাক ডেটা, মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ, সামাজিক মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমাজের ৩ থেকে ৪০ শতাংশ অপরাধ কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে জরুরি সময়ে সেবাপ্রত্যাশীর ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় ২৩ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ প্রযুক্তি সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিহ্নিত ও তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে পারে। একই সঙ্গে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান, আত্মগোপনে থাকা অপরাধীকে খুঁজে বের করা ও জনসমাগমে মানুষের নিরাপত্তায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি শনাক্তকরণ, যত্রতত্র পার্কিং, রাস্তা পারাপারসহ সকল অসংলগ্ন ও আইনবহির্ভূত কার্যক্রম রোধ করা সম্ভব হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের বাস্তবিক তথ্যের ওপর একটি সুবৃহৎ ডেটা সেট তৈরি করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনন্য ভূমিকা পালন করবে।

স্মার্ট পুলিশিং সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, স্মার্ট পুলিশিং হলো পুলিশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার রূপরেখা। স্মার্ট পুলিশিংয়ের মূল লক্ষ্য বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে পেশাদারত্বে নিজেদের তৈরি করা এবং জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলা। জনগণ, রাষ্ট্রের জন্য পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। তিনি আরও বলেন, পুলিশের বর্তমান স্লোগান ‘জনতাই পুলিশ’ বা ‘পুলিশ হবে জনতার’ এটি হচ্ছে স্মার্ট পুলিশের মূল রূপরেখা।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, স্মার্ট পুলিশিং অনুযায়ী সারা দেশে থানাগুলোতে সাধারণ ডায়েরি অনলাইলে রেকর্ড করা হয়। ই-ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিডিএমএস চালু হয়েছে। পুলিশের পারসোনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যায়ের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের সকল পর্যায়ের সদস্য (কনস্টেবল থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক) চাকরিজীবনের শুরু থেকে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত সব তথ্য আপডেট করা হচ্ছে। এনজিপিআইএমএসের সঙ্গে সরকারের নথির ইন্টিগ্রেশনের কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপদ নির্ভরযোগ্য টায়ার থ্রি কমপ্লিমেন্ট ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্মার্ট পুলিশিং নিশ্চিত করতে ডেটা সেন্টারে ১০৫টি অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ডেটা স্টোরেজ ব্যবহারের কারণে অধিকতর নিরাপত্তা ও দক্ষতার সাথে জিডিটাল পুলিশ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) আধুনিকায়ন করে সব জেলায় বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তথ্যের নিরাপত্তায় নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ব্যাকবোন স্থাপন ও ভিপিএন কনফিগারেশনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর মাধ্যমে পুলিশের ১ হাজার ৭০০ অফিসকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফল উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) ইউনিট করা হয়েছে। 

মাঠপর্যায়ে লজিস্টিক ও অফিসার বাড়াতে হবে: একধিক জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী পুলিশের বেস্ট প্রাকটিস রয়েছে। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে নানা সমস্যার কারণে বেস্ট প্রাকটিস এখনও পুরোপুরি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। স্মার্ট পুলিশিং চালু করতে হলে মাঠপুলিশে কর্মকর্তা বেইজড পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত গাড়িসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট। এখনও অনেক থানা আছে, যেখানে একটি মাত্র গাড়িতে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জন্য ব্যবহারের পাশাপাশি প্যাট্রোলিং কাজে ব্যবহার হয়। থানাপর্যায়ে পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। জেলাপর্যায়ে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। একজন ভুক্তভোগী যে সমস্যাই পড়ুক, সেটি তার কাছে বড় সমস্যা। তিনি যখন থানায় আসেন তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেবে এটি তিনি প্রত্যাশা করেন। কিন্তু জনবল সংকট ও লজিস্টিক সাপোর্ট পর্যাপ্ত না থাকায় সেটি অনেক সময় হয়ে ওঠে না। 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, স্মার্ট পুলিশিং হলো প্রথমে ভুক্তভোগীর অভিযোগ শুনে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা। কোনো অপরাধের তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো। অপরাধের ঘটনা পর্যালোচনার পাশাপাশি অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা। কিন্তু আমাদের দেশের পেক্ষাপটে নানা সমস্যার কারণে দ্রুত সময়ে পুলিশের রেসপন্স না পাওয়ার অভিযোগ অনেক বেশি। তদন্ত নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। এগুলো একদিনে সমাধান হবে না। 

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, স্মার্ট পুলিশিং মফস্বল পর্যায়ে শুরু করতে হলে অফিসার বেইজড পুলিশিং কার্যক্রম করা জরুরি। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টও বাড়াতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের নীতিনির্ধারকরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন। 

তিনি আরও বলেন, বেস্ট প্রাকটিস পুলিশিংয়ের ওপর প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণের সংখ্যা ও পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা