নড়াইল সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৫ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৫ পিএম
নড়াইলে নানা কর্মসুচির মধ্যে দিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দিনব্যাপী বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নূর মোহাম্মদ নগর ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পুলিশের সশস্ত্র সালাম, দোয়া-মাহফিল ও আলোচনা সভা।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ আশফাকুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতি শীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিংকন বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মতিন,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে মো: মোস্তফা কামাল শেখসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা (বর্তমান নাম নূর মোহাম্মদ নগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মার নাম জেন্নাতুন্নেছা। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভূমি মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের কর্মময় জীবন থেকে জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) এ যোগদান করেন তিনি। যা বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
নূর মোহাম্মদ শেখ যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নের্তৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলে নূর মোহাম্মদ শেখ হাতে এলএমজি এবং কাঁধে আহত সাথীকে নিয়ে শত্রু পক্ষের দিকে এগিয়ে যান এবং গুলি ছুড়তে থাকেন। এ সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে মারাত্মক জখম হন তিনি।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নূর মোহাম্মদ আশংকাজনক অবস্থায়ও নিজের জীবনের কথা না ভেবে যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং গুলি চালাতে চালাতে সামনের দিকে অগ্রসর হন। এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ এবং দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ শেখ। তাকে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে সমাহিত করা হয়।