ভুবন সেন, খানসামা (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৭ এএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:২৯ এএম
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত ভাণ্ডারদাহ গ্রামের আব্দুল মজিদ ও জাহানারা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আলমগীর ইসলাম। স্বপ্ন ছিল প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনার। কিন্তু অভাবের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা থেমে যায় তার। এরপরও দমে যাননি আলমগীর। নিজের সৃজনশীল চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন তিনি। ইতোমধ্যে ছোট আকারের একটি বিমান তৈরি করেছেন। তার তৈরি বিমান প্রায় এক কিলোমিটার উঁচুতে আধা ঘণ্টা ধরে উড়তে পারে। তার এই কাজ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করে আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ।
আলমগীরের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও সেখানেই থেমে যায় তার পড়াশোনা। বাড়ির কাজ ছাড়াও চুক্তিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে মানুষের ক্ষেতে পানি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করেন আলমগীর। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট আলমগীর প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির কাজে সময় ব্যয় করেছেন। আলমগীর অনলাইন ও ইউটিউব থেকে ধারণা নেন।
গতকাল শনিবার ভাণ্ডারদাহ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় খেলার মাঠে বিমান ওড়াচ্ছেন আলমগীর। তা দেখতে উৎসুক মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আলমগীর জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে বিভিন্ন মডেলের বিমান তৈরি করে ওড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। সফল হয়েছেন গত বছর। আগে অনেক বিমান তৈরি করে ভেঙে ফেলেছেন, আবার নতুন করে তৈরি করেছেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সর্বশেষ তৈরি করেছি ছেচনা মডেলের একটি বিমান। এটি গত ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে তৈরির কাজ করে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে শেষ করি। এরপর বাড়ির পাশে খেলার মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে বিমানটি ওড়াই। প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি ছোট বিমানের মূল বডি কর্কশিট দিয়ে তৈরি করেছেন আলমগীর। ট্রান্সমিটার, রিসিভার, ব্যাটারি, মোটর, ফ্যান, চাকা রয়েছে তার বিমানে। রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করে বিমানটি আকাশে উড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানান আলমগীর।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল বিমান তৈরির। সেটি আজ পূরণ হয়েছে। তবে আমার একটি ল্যাপটপ ও আর্থিকভাবে সক্ষমতা থাকলে এই ছোট বিমানটি আরও উন্নত করা যেত। সেই সঙ্গে সহায়তা পেলে আমার শৈশবের এই স্বপ্ন পূরণের ধাপ আরও এগিয়ে যেত। আলমগীরের এই উদ্ভাবন বিষয়ে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আলমগীর বিভিন্ন যন্ত্র তৈরির কাজে সম্পৃক্ত। তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি এসব তৈরি করেন। এখন বিমান তৈরি করায় এলাকার সবাই দেখতে আসত। সংশ্লিষ্টদের যদি সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে।
সামসুল ইসলাম নামে এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, আলমগীরের এই কাজে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অসচ্ছলতার কারণে সে প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। তাই সবার সুদৃষ্টি প্রয়োজন। খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন উদ্ভাবনী এই কাজের প্রশংসা করে বলেন, এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রম স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় একটা উদাহরণ। এই প্রযুক্তি বিকাশে প্রশাসন তার পাশে থাকবে।