হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৪২ এএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৫২ এএম
প্রবা ফটো
একদিকে যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে দেশে কমেছে পণ্য আমদানি। এই দুই মিলে চট্টগ্রাম বন্দরে কমেছে বাণিজ্যিক জাহাজের যাতায়াত। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে বন্দরে জাহাজ চলাচল কমেছে ১৭৫টি। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসেও বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কম হয়। আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় গত মাসে বন্দরে জাহাজ কমেছে ২৫টি। তবে বাণিজ্যিক জাহাজ কমলেও বেড়েছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং।
শিপিং সেক্টর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কমে যাওয়ার পেছনে একটাই কারণ সেটি হলো ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। যে কারণে দেশে কমেছে আমদানি-রপ্তানি, এর প্রভাবই পড়ছে বন্দরে জাহাজ যাতায়াতে। তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, বন্দরে এখন আগের চেয়ে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে। একই জাহাজে অধিক পরিমাণে কার্গো ও কন্টেইনার পরিবহন করা যায় বিধায় এখন বন্দরে জাহাজের যাতায়াত কমছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ যাতায়াত কমছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। আমদানি-রপ্তানি কমলে জাহাজ আসা-যাওয়াও কমবে। জাহাজ যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখন আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের শিপিং সেক্টর। বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে শিপিং এজেন্টরা কঠিন সময় পার করছেন। বন্দরে জাহাজ যাতায়াত আরও কমলে তখন ছোটখাটো শিপিং এজেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হবে।’
আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে জাহাজের যাতায়াত কমে যাওয়ার পেছনে চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে না পারা প্রধান কারণ হলেও এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়া। হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে বড় শিপিং কোম্পানিগুলো এ রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল সীমিত করেছে। এখন অধিকাংশ বাণিজ্যিক জাহাজ সুয়েজ খালের পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা তীরবর্তী দ্য কেপ অব হোপ রুট হয়ে যাতায়াত করছে। যে কারণে এখন বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কমে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ।
বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কমেছে ১৭৫টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয় ২ হাজার ৫৪৪টি, সেখানে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয় ২ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে শুধু গত জানুয়ারি মাসেই জাহাজ যাতায়াত কমেছে ২৫টি। ২০২৩ সালের জুনয়ারি মাসে বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং ছিল ৩৪৩টি, সেখানে এবার ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয় ৩১৮টি।
বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ যাতায়াত কমলেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে। জাহাজ যাতায়াত কমায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যাওয়ার কথা থাকলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এখন বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৮৬ হাজার ৯২৪ টিইইউস (খালাসকৃত কন্টেইনার)। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি এবং রপ্তানি মিলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ টিইইউস। সেখানে এ বছরের গত সাত মাসে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৫ টিইইউস।
একই সময়ে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় এই অর্থবছরের গত সাত মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৮৮১ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয় ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন। সেখানে এই বছর প্রথম সাত মাসে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬ মেট্রিক টন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর সচিব ওমর ফারুকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বন্দরে জাহাজ যাতায়াত কমলেও একই সময়ে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং দুটোই বেড়েছে। তার মানে বন্দরের কর্মযজ্ঞ কমছে তা নয়। জাহাজ কম আসার পরও কার্গো এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ার কারণ হচ্ছে এখন আগের চেয়ে বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে। আগে একটি জাহাজে কম পণ্য আসত, সেখানে এখন একটি জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। তাই জাহাজ যাতায়াত কমলেও বন্দরে কার্গো এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে।’