রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩১ এএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩১ পিএম
অন্য ফসল চাষে লাভবান হওয়ায় কমছে তামাক চাষ। প্রবা ফটো
রংপুরে কমতে শুরু করেছে তামাক চাষ। কোম্পানির লোভনীয় অফারে বিগত সময়ে জেলায় তামাক চাষ বেড়েছিল। বর্তমানে কৃষকরা সচেতন হয়ে তামাকের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের নানা ফসল চাষ করছেন। এতে করে লাভের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে। আর তামাক চাষ কমিয়ে অন্য ফসল চাষে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা প্রদানসহ উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। এতে করে গত ৫ বছরে ৫৪০ হেক্টর জমিতে কমেছে তামাক চাষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় একসময় প্রচুর তামাকের চাষ হতো। বিভিন্ন কোম্পানির কৃষকদের তামাক চাষে অগ্রিম অর্থ সহযোগিতা করত। তাই কৃষকদের কাছে অর্থকরী ফসল হিসেবে তামাক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এতে করে জেলায় বিড়ি-সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানি স্থাপন করা হয়। কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ বিড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সরকার তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে শুরু করলে দিন দিন কমতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ তামাক চাষে জমির ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি নিয়ে সচেতন করছে। ফলে তারা তামাকের পরিবর্তে আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, গম, সূর্যমুখীসহ নানা ফসলের চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। বর্তমানে জেলার তারাগঞ্জ, সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়াসহ অন্য উপজেলার সমতল ও চরের জমিতে স্বল্প পরিসরে তামাকের চাষ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর হয়েছিল ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, ২০২১ সালে ১ হাজার ৯২৫ হেক্টর, ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। সে হিসাবে গত ৫ বছরে ৫৪০ হেক্টর জমিতে কমেছে তামাক চাষ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার ইচলী গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘হামার এত্তি আগোত ম্যালা মানুষ তামাক আবাদ করছিল। এ্যালা অনেক কমি গেইচে। বেশিরভাগ মানুষ আলু, ভুট্টা আবাদ করে। ওটেও ভালো লাভ পাওয়া যায়। মুই অল্প একনা জমিত তাংকু (তামাক) আবাদ করছি। গেল বার তো ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হইচে। এইবার যে কি হয়। তাংকু আবাদ, কাটা, শুকার কাজ করতে ম্যালা কষ্ট করা নাগে। সামনের বার থ্যাকি মুইও আর তাংকু আবাদ করিম না।’
শংকরদহের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘চরোত তাংকুর চেয়ে মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টাত লাভ বেশি। ক্ষ্যাত থ্যাকি পাইকাররা কুমড়া-ভুট্টা নিয়া যায়, হামার ভালো লাভ থাকে। সেই জন্তে তাংকু আবাদ ছাড়ি দিছো। এ্যালা বেশিরভাগ মানুষ কুমড়া-ভুট্টা আবাদ করতোছে। তাংকু তো বিষ বাহে।’
তারাগঞ্জের ইকরচালীর কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের সকল সদস্য তামাক কাটা, শুকানো, বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখার সঙ্গে জড়িত থাকে। ফলে পরিবারের সবারই শারীরিক ক্ষতি হয়। এটা বুঝে তামাক আবাদ থেকে সরে আসছি। আলু, ভুট্টাতে এখন বেশি লাভ। তাই এলাকায় এসব ফসলই আবাদ হচ্ছ।’
জানতে চাইলে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘তামাকের পরিবর্ততে আলু, মিষ্টিকুমড়াসহ উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাই দিন দিন রংপুরে তামাকের আবাদ কমেছে। কৃষকরা স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় নিজেরাই তামাক চাষ থেকে সরে আসছে। এ ছাড়া তামাকের চাষ কমাতে বিভিন্ন সময় কৃষকদের প্রণোদনাও প্রদান করা হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই অন্য কৃষকরাও তামাক আবাদ থেকে সরে আসবে।’