রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৬ এএম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০১ এএম
ঠাকুরগাঁও জেলার ১৩২ মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয় না। এতে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারছে না। দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৩২টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১টি, বালিয়াডাঙ্গীতে ১৯টি, রানীশংকৈলে ১৯টি, পীরগঞ্জে ২০টি এবং হরিপুরে ১১টি। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোথাও শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মাদ্রাসাগুলোতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়েও শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয় না। কিংবা শহীদ মিনার না বানিয়ে আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিলও করা হয় না।
রাণীশংকৈল উপজেলার পাঁচপীর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘আমাদের মাদ্রাসার মাঠ অনেক বড়। কোনো একটা পাশে যদি শহীদ মিনার নির্মাণ করে, তাহলে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারি।’
সদর উপজেলার খোশবাজার এস.ডি কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘জেলার মধ্যে আমাদের মাদ্রাসা সবচেয়ে বড়। সামনে বিশাল এক মাঠও আছে। কিন্তু শহীদ মিনার নেই। অথচ প্রতিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। যারা স্কুলে পড়ে একুশে ফেব্রুয়ারি সবাই শহীদদের শ্রদ্ধায় ফুল দেবে। আর মাদ্রাসায় শ্রদ্ধা জানাতে পারব না, ফুলও দিতে পারব না। আমাদের দাবি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।’
পুরাতন ঠাকুরগাঁও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আরিফুল রহমান বলে, ‘২১ ফেব্রুয়ারি সবাই ভাষাশহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে ফুল দেয়। অথচ আমরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এটা থেকে বঞ্চিত। আমরা ফুল দিতে পারি না। মাদ্রাসার বড় মাঠ আছে। মাঠের পাশেই একটা শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা যেন শহীদদের সম্মান জানাতে পারি।’
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরাও চাই মাদ্রাসায় যেন একটি শহীদ মিনার হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে। বিষয়টি অনেকবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
নাহিদ রহমান আকাশ নামে শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি লজ্জাজনক। যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, অথচ সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও জানতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিরুদ্দোজা বদর বলেন, ‘মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ কয়েকজন অকাতরে জীবন দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের এ আত্মত্যাগ কখনোই ভোলার নয়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস জানতে হবে। তাই প্রতিটি মাদ্রাসায়ই শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন, মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ মিনারের তাৎপর্য বুঝতে পারবে। তাদের চেতনা জাগ্রত হবে।’
সদর উপজেলার বালিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘জেলার সব উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে, শুধু বঞ্চিত মাদ্রাসাগুলো। আমরা চাই প্রতিটি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। স্কুলের মতো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও শহীদদের স্মরণ করুক। ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানুক।’
পুরাতন ঠাকুরগাঁও দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। যত দ্রুত সম্ভব শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আকতার বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব শহীদ মিনার স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ আর জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরাও চাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন হোক। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করব।’