লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৯ পিএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৭ পিএম
লক্ষ্মীপুরে শিশুসন্তান নৌওস আফরিন নিখিকে সাইকেলে করে নেন অপহরণকারী ওই ব্যক্তি। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবিটি নেওয়া।
লক্ষ্মীপুরে মক্তব থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৯ বছর বয়সি শিশুসন্তান নৌওস আফরিন নিখি নামে এক স্কুলছাত্রীকে ‘অপহরণের’ চেষ্টা করেছে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। এসময় চিৎকার করে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলে এক দোকানি তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। তবে শিশুটির কানে থাকা স্বর্ণের দুল খুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। পরে বাড়িতে ফিরলেও কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে উঠে শিশুটি। খাওয়া-ধাওয়া ঠিকমতো খাচ্ছে না সে।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। তার পরদিন রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নিখির মা নুরজাহান।
আজ সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডর পশ্চিম বটতলী গ্রামের চাঁন মিয়া চৌকিদার বাড়িতে গেলে নিখি ও তার মা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা যায়।
নিখি পশ্চিম বটতলী গ্রামের কাতার প্রবাসী ছৈয়দ আহাম্মদ ওরফে চুন্নুর মেঝো মেয়ে ও উত্তর মান্দারী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বিকালে সে স্থানীয় দারুল উলুম রাহমানিয়া মাদ্রাসায় মক্তবে আরবি শিক্ষা নেয়।
শিশুটির মা নুরজাহানের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম রেজা তাদের বাড়িতে তদন্তে আসেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে নিখি আরবি শিখতে মক্তবে যায়। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যার আগমূহুর্তে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে মান্দারী-দত্তপাড়া সড়কের পশ্চিম বটতলী কাঁঠাল বাড়ির পশ্চিমে পৌঁছলে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি তার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে নিখিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেবে বলে বাইসাইকেলে উঠতে বলে। সে উঠতে না চাইলেও বিভিন্ন কৌশলে তাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মোল্লার হাটের দিকে নিয়ে যায়। এর মধ্যে তার হাত দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে কানের দুল খুলে নেয় ওই ব্যক্তি। এসময় দৌঁড়ে পালিয়ে গেলে এক দোকানি তাকে উদ্ধার করে। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে বাড়িতে ফোন দিলে রাতে শিশুটিকে তার মা নুরজাহান গিয়ে নিয়ে আসে।
নৌওস আফরিন নিখি বলেন, ‘বাড়ি আসার পথে আমাকে ওই লোক তার সাইকেল ধরতে বলে। একপর্যায়ে সাইকেলে উঠতে বলে। রাজি না হওয়ায় তিনি আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। পরিচয় জানার পর তিনি বলেন উনার বাড়িও আমার বাড়ির পাশে। উনি তার মেয়েকে আনতে যাচ্ছেন। মেয়েকে নিয়ে তিনি ওয়াজে যাবেন। তবুও আমি উঠতে চাইনি। তখন তিনি বলেন তিনিও বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। এতে তিনি আমাকে সাইকেলে উঠিয়ে নেন। পরে আমার হাত বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে কানের দুল খুলে নেয়। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে পালিয়ে গেলে একজন লোক আমাকে উদ্ধার করে। পরে মা আমাকে নিয়ে আসে।’
এসব বলেই কেঁদে উঠে নিখি। দুচোখ দিয়ে তার পানি ঝরছিল। আতঙ্কে কাটছে তার দিন।
নিখির মা নুরজাহান বেগম বলেন, সিসি ক্যামেরায় লোকটিকে দেখেছি। তাকে এর আগে কখনও দেখিনি। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, ‘নিখিকে অপহরণ করতেই চেয়েছিল। পালিয়ে গিয়ে সে বেঁচে যায়। বিষয়টি তার মা আমাকে জানালে থানায় অভিযোগ করার জন্য বলি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ‘শিশুটির মা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা স্থানীয় কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করছি। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।’