× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংবাদ সম্মেলন

খেলার মাঠ থেকে ‘ধরে নিয়ে’ অস্ত্র মামলায় চালান

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১১ পিএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৫ পিএম

সংবাদ সম্মেলনে আসামি তুর্কির বড় ভাই রাহাত হোসেন কফিলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। প্রবা ফটো

সংবাদ সম্মেলনে আসামি তুর্কির বড় ভাই রাহাত হোসেন কফিলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। প্রবা ফটো

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক যুবককে খেলার মাঠ থেকে খালি হাতে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই যুবকের পরিবার এ অভিযোগ করে।

গ্রেপ্তার হওয়া যুবকের নাম তানভীর হোসেন তুর্কি। ২৪ বছর বয়সি তুর্কি উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মাইজপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় যুবলীগের কর্মী।

তুর্কির স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক রোষানলের শিকার তুর্কি। গেল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার পরাজিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে তাকে এ মামলায় ফাঁসিয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তুর্কিকে অস্ত্রসহ-ই ধরা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তুর্কির বড় ভাই রাহাত হোসেন কফিল বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার সময় আমাদের স্থানীয় মাঠে ক্রিকেট খেলছিল তুর্কি। এ সময় আট থেকে দশজন সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় এলাকাবাসী আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ মারমুখী আচরণ ও ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তুর্কিকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর আমার আরেক ছোট ভাই হিরো তুর্কিকে দেখতে গেলে তাকেও থানার ভেতর কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তুর্কির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা পর সাতকানিয়া থানা পুলিশ তুর্কিকে অস্ত্রসহ ছবি দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করে। পুলিশের এমন অন্যায় আচরণে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে কফিল বলেন, ‘আমার ভাই কোনো অন্যায় কাজ করলে, আইনের চোখে অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত বিচারে আমাদের কারও আপত্তি নেই। কিন্তু খেলার মাঠ থেকে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে নিরস্ত্র কাউকে অস্ত্রধারী বানানো কত বড় অপরাধ হতে পারে?’

এর বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তের মাধ্যমে আমার ভাইকে অস্ত্রধারী বানানোর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও সাজানো অস্ত্র উদ্ধার মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কফিল বলেন, ‘আপনাদের জ্ঞাতার্থে অস্ত্র উদ্ধার ঘটনার নেপথ্যের বিষয় আপনাদের অবগত করতে চাই। আমার ভাই তুর্কি স্থানীয় যুবলীগ কর্মী। (দ্বাদশ সংসদ) নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভূমিকা রাখার কারণেই কোনো রাঘব-বোয়ালের ইশারায় আজ তাকে (তুর্কি) সাজানো অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

তবে এই ‘রাঘব-বোয়াল’ কে বা কারা, নাম বলেননি তিনি।

তুর্কির ভাই কফিলের দাবি, তুর্কিকে ধরে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে গেল নির্বাচনের আগেই। প্রমাণ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট একটি অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন তিনি। যেখানে তুর্কিকে অস্ত্রসহ চালান দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সাতকানিয়া থানার এক পুলিশের সঙ্গে সোর্সের কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি তার।

এই অডিও রেকর্ড নিয়ে কফিল বলেন, ‘‘তুর্কিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও এবং ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রেজাউল ও জনৈক সোর্সের কয়েক দিন পূর্বের কথপোকথনের এই অডিও রেকর্ড প্রমাণ করে তুর্কিকে গ্রেপ্তার ও সাজানো অস্ত্র মামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমাদের হাতে থাকা অডিও রেকর্ডে এসআই রেজাউল আমার ভাই তুর্কিসহ রিয়াদ, রুম্মন, সুমন, শহীদ, রিয়াদের ড্রাইভারকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সোর্সকে অনুরোধ করছিলেন। যেখানে এসআই রেজাউল বিশেষভাবে তুর্কির কথা বলে তাকে ‘অস্ত্রসহ দিয়ে দিব’ কথাটি বলতে শোনা যায়। প্রত্যুত্তরে সোর্সকে অস্ত্র না দিয়ে ইতোমধ্যে দায়ের করা মামলায় চালান দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। আমাদের হাতে সেই অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড আছে।’’

কী কথোপকথন অডিও রেকর্ডে

ওই কথোপকথনে এসআই রেজাউল পশ্চিম ঢেমশা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য সোর্সকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এ সময় তুর্কি ছাড়াও আরও যাদের ‘খোঁজ’ চাইতে শোনা যায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে, তাদের মধ্যে রয়েছেন— লিটন, রিয়াদ, রুম্মন, সুমন, শহীদ, রিয়াদের ‘ঘাড়ত্যাড়া’ ড্রাইভারসহ আরও কয়েকজন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা ‘আমিনুল ইসলামের লোক’ হওয়ায় রুমনের বিষয়টা বাদ দিতে বলেন ওই এসআই।

কথোপকথনের একপর্যায়ে এসআই রেজাউলকে বলতে শোনা যায়, ‘মনে করেন যে, আমরা অস্ত্রসহ দিই দিয়ে দেব।’ সোর্সকে ওই সময় বলতে শোনা যায়, ‘এখন অস্ত্র না দিয়া এমনে যে মামলা আছে, সেই মামলায় দিয়া দিলে কী হইছে?’ জবাবে ওই পুলিশ বলেন, ‘মামলায় দিয়ে দিব আরকি!’

তবে এ কথোপকথনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রেজাউল।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমি (গত মাসের) ৩০ তারিখ থেকে হাসপাতালে। আর ওই রেকর্ড আমিও শুনেছি। নির্বাচনের আগে তার (তুর্কির) খোঁজ করেছিলাম। তখন সে আমাদের ওপর গুলিও করেছিল। তবে অস্ত্র দিয়ে চালান দেব এমন কথা আমি বলিনি।’

এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘আলমগীরপাড়া বিলে তুর্কির কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও চার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছি আমরা। সেখানে যারা উপস্থিত ছিল তারা সাক্ষও দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনসহ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত এসপি ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মুখপাত্র আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তুর্কিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমি এখনও জানি না। তবে যত দূর তার বিষয়ে জানি সে একটা সন্ত্রাসী। সেখানে সে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি সব করে। বড় একটা গ্রুপ মেনটেইন করে। তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সে পুলিশের ওপর গুলিও চালিয়েছিল।’

তুর্কিকে খালি হাতে ধরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে অস্ত্র দিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে, এমন কোনো কথা জানি না। যদি কোনো অভিযোগ পাই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা