রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৮ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১০ পিএম
আখাউড়া স্থলবন্দরে কোনো ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ইমিগ্রেশনসহ বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে কাস্টমস ভবনের সামনে পায়চারি করেন নেপাল সূত্রধর। সঙ্গে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মগড় এলাকার বাসিন্দা। যাবেন চট্টগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি। সঙ্গে এনেছেন ভারতীয় রুপি। রুপি বিনিময় করে টাকা কোথায় থেকে নেবেন তা খোঁজ করতে থাকেন। স্থলবন্দর থেকে রেলওয়ে স্টেশন গিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার টিকিট কিনতে তার টাকার প্রয়োজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে কোনো ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময় বুথ) না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন তিনি।
আখাউড়া স্থলবন্দর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলছে। পরবর্তীকালে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ায় ২০০৮ সালে স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। দিনে দিনে যাত্রীদের কাছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পছন্দের পথ হয়ে ওঠে এ স্থলবন্দর। যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আহরণও বাড়ছে সরকারের। তবে যাত্রী পারাপার ও রাজস্বের পরিমাণ বাড়লেও সোনালী ব্যাংকের একটি বুথের মাধ্যমে শুধু ভ্রমণ কর নেওয়া হয়। কোনো মুদ্রা বিনিময় বুথ অথবা মানি এক্সচেঞ্জে নেই আখাউড়া স্থলবন্দরে। আর এতেই নেপাল সূত্রধরের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হয় সবাইকে।
আখাউড়া স্থলবন্দর পার হলেই আগরতলা শহর। সেখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই আগরতলা বিমানবন্দর। এ ছাড়া রেলস্টেশনও শহরের কাছাকাছি। ফলে আকাশ ও রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশি যাত্রীরা দেশটির পর্যটন শহরগুলোয় যাতায়াত করতে পারেন। এতে খরচও সাশ্রয় হয়। মূলত এসব কারণেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ যাত্রী আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াত করেন। বিভিন্ন উৎসবে এ সংখ্যা প্রায় দিগুণ হয়। পণ্য রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি সরকার যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদও বিপুল রাজস্ব পায়।
শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে যাত্রী পারাপার হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৫ জন। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৩ জন।
সম্প্রতি আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে কথা হয় ফজলুর রহমান ও আকাশ মিয়া নামে দুজনের সঙ্গে। তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন। এখন ভারতে ফিরে যাচ্ছেন। আসার সময় তারাও ভারতীয় রুপি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। পরে দালালের মাধ্যমে অনেক কম মূল্যে রুপির বিনিময়ে টানা নেন। তারা বলেন, ‘এ বন্দরে ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জ থাকাটা খুব জরুরি। কারণ এ পথে প্রতিদিন বহু মানুষ যাতায়াত করে। মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংক না থাকায় রুপি ও টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের মতো ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণকে।’
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন ঢাকার বাসিন্দা জামিল রহমান। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানান, ডলার এন্ডোস করা আছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে তিনি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। ওপার (ভারত) গিয়ে বিনিময় করে রুপি নেবেন। এ বন্দরে যদি ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জে থাকত, তাহলে ভোগান্তি কম হতো। কারণ ওপারে টাকা বিনিময় করলে তার ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। তিনি মনে করেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এই বন্দর ব্যবসা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেহেতু এখানে ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জ খুব প্রয়োজন।
ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর আখাউড়া। দিন দিন এপথে যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে সোনালী ব্যাংকের শাখা বা মানি এক্সচেঞ্জ হলে যাত্রীরা সহজে টাকা বা রুপি বিনিময় করতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। সমস্যা সমাধান হলে এই স্থলপথ হবে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ।