মো. রফিকুল ইসলাম সান, পাবনা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম
নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়। এতে জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। প্রবা ফটো
পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় তিন ফসলি জমি, নদীপারের জমি, পরিত্যক্ত জমিগুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে ঠিক তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা ও মাঠের ফসল, দূষিত করছে পরিবেশ। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ এসব ভাটা। ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ভাটাগুলোতে। জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে শঙ্কা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের কারণে একদিকে আবাদি জমি কমছে অপরদিকে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। এখন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
দুই উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০টি ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। ইটের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। কিন্তু বন ও পরিবেশ দপ্তর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য।’ কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আর পরিবেশ কর্মকর্তারা রীতিমিতো অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাঁথিয়া উপজেলায় এফ আর এফ ও বেড়াতে আল-মদিনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। তার বাইরে যত ভাটা রয়েছে সব অবৈধ। কোনো ইটভাটাকেই বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় নাই। আমিনপুরে তো ঘরে ঘরে ইটভাটা রয়েছে। তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে জোরপূর্বক ভাটা পরিচালনা করছে। তারা এতটাই বেপরোয়া যে তাদের থামানো প্রায় অসম্ভব। আপনারা অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে লেখেন, যাতে তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়ার জাতসাখিনী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভাটা রয়েছে। জাতসাখিনীর খাস আমিনপুর ভাটা গ্রাম নামেই পরিচিত। এ মহল্লায় পাশাপাশি পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে। একটি মহল্লায় পাশাপাশি এতগুলো ভাটা পরিবেশের জন্য অশুভ জেনেও কেউ কিছু করতে পারছেন না। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেসার্স একতা, সততা, আলো, আল-মদিনাসহ কয়েকটি ভাটা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চুল্লি আইন অনুযায়ী এগুলো অবৈধ। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠখড়ি ব্যবহার করছে। ফসলি জমির মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ভাটা। আইন অনুযায়ী চুল্লির চিমনির উচ্চতা ১২০ ফুট থাকার কথা থকলেও বাস্তবে তা ৫০ থেকে ৬০ ফুট রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন পরিদর্শন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।