× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজশাহীতে থামানো যাচ্ছে না নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০৮ এএম

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:২২ এএম

রাজশাহীতে থামানো যাচ্ছে না নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ

রাজশাহী নগরীর দেবিশিংপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এরশাদ আলীর আধাপাকা বাড়ির পাশেই বিশাল ভবন নির্মাণ করছেন গোলাম আজম। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে এ ভবন নির্মাণ করছেন তিনি। এ কারণে আরডিএ বরাবর অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এরশাদ আলীর পরিবার। আরডিএ অভিযোগ তদন্ত করে ওই ভবন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা পায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি ভবনটির চারদিকের প্ল্যানবহির্ভূত বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলতে বা সরিয়ে নিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে চিঠি দেন আরডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। কিন্তু ওই নির্দেশনা অমান্য করে ভবনটির অবৈধ অংশ না ভেঙেই গোলাম আজম ভবনের নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছেন। এরই মধ্যে ভবনটির চারতলা নির্মাণের পর পাঁচতলার জন্য কলাম ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। 

একইভাবে, আরেকটি পরিকল্পনাবহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নগরীর রানীবাজার টাইলস পট্টি এলাকার একটি ড্রেন দখল করে। এ ভবনের মালিকানায় আছেন মোঃ পাভেল, তার মা ও বোন। অভিযোগ পেয়ে আরডিএ কর্তৃপক্ষ ভবনটির মালিককে নির্মাণ কাজ বন্ধের পাশাপাশি কারণ দর্শাতে বলে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির নির্মাণ কাজ এখনও চলমান রয়েছে।

এ  ছাড়া নগরীর লক্ষ্মীপুরে জিপিও পোস্ট অফিসের উত্তরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় দীর্ঘ বছর তিনেক আগে। বিল্ডিং কোড অমান্য করে এ ভবন নির্মাণ করা হয়। এক পর্যায়ে ভবনটির দক্ষিণের বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক তখনই আরডিএকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। কিন্তু একাধিকবার কারণ দর্শাতে বলার পরেও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করতে পারেনি আরডিএ। গত বছর শেষের দিকে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ভবনটি বর্তমানে মঞ্জু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজশাহীজুড়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিল্ডিং কোড অমান্য করে এভাবে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। অবশ্য কারও পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আরডিএ কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়ে থাকে। 

আরডিএ জানাচ্ছে, রাজশাহী মহানগরে গত দুই বছরে ভবন নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতি বছর এক হাজারের বেশি নতুন ভবন নির্মাণের আবেদন জমা পড়ছে অথরাইজড শাখায়। তবে অধিকাংশ ভবনই নির্মাণ করা হচ্ছে আরডিএ অনুমোদিত নকশার বাইরে। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ির পাশাপাশি ডেভেলপার বা কনস্ট্রাকশন ফার্মগুলোও এমন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। 

প্ল্যান বহির্ভূত একাধিক ভবন নির্মাণকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভবনের প্ল্যানের অনুমোদনের জন্য আরডিএর নির্ধারিত ফি’র চাইতে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে থাকেন। প্ল্যানার বা নকশা প্রস্তুতকারীদের মাধ্যমে এই অর্থের লেনদেন হয়। জমি ও ভবনের আয়তনের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। যা ২০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

বিভিন্ন তথ্যমতে, অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হলোÑ আরডিএ’র প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা এবং অন্যান্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা। বিল্ডিং কোড অমান্য করে কোনো ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়ার পর আরডিএ ওই ভবন মালিককে নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ বিভাগকেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার বা বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর আরডিএ’র এ অনুরোধে কর্ণপাত করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরডিএ’র এমন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) জাকির হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মোঃ আব্দুর রশিদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

বর্তমানে আদালতে বিভিন্ন ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে আরডিএ’র ৭৮-টির মতো মামলা চলছে। প্রতি বছর গড়ে এক হাজার ভবনের পরিকল্পনা পাসের আবেদন পড়ে আরডিএ’তে। সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর তা অনুমোদন দেন অথরাইজড অফিসার। প্রতিষ্ঠাটির অথরাইজড শাখা নকশার অনুমোদন ও ভবন নির্মাণ কাজের পর্যবেক্ষণ করেন। ৯ জন বিল্ডিং ইনস্পেক্টরের পদ থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ রয়েছে মাত্র ৪ জনের। এ ছাড়াও একজন করে সহকারী অথরাইজড অফিসার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পদ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। তবে এগুলোতে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার মুহা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেবিশিং পাড়ার গোলাম আজমের ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ভাঙতে বলা হয়েছে; রানীবাজারের মো. পাভেলকে ভবনটির কাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর জিপিওর উত্তরের ভবনটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ইমারত নির্মাণ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে তদারকির জন্য আরডিএ’র পৃথক কমিটি রয়েছে। কারণ দর্শাতে বলার পাশাপাশি কাজ বন্ধ না করা হলে আমরা আদালতের কাছে যাই।’ এ ধরনের একাধিক মামলার দৃষ্টান্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্ল্যান পাসে ফি-এর চাইতে অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইমারতের নকশা প্রস্তুত ও নির্মাণ তদারকির উপযুক্ত ৪১ জনের একটি তালিকা আমরা দিয়ে রেখেছি। এ ছাড়া বলা হয়েছে, নকশার অনুমোদনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ভবন মালিককে উপস্থিত থাকতে। অফিসের বাইরে কেউ যদি কাউকে প্ল্যান পাসের জন্য নির্ধারিত ফি এর চাইতে অর্থ দিয়ে থাকেন, সে দায় আরডিএ’র নয়।’ 

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, ‘আরডিএ শুধুমাত্র প্ল্যান পাস দিয়েই ক্ষান্তি দিচ্ছে। অথচ তাদের উচিত তাদের অনুমোদন দেওয়া ভবনগুলোর নির্মাণকাজ যথাযথ হচ্ছে কি না, সেটিরও তদারকি করা। বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আরডিএ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে তদারকি ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন; বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি।’

তিনি আরডিএ’র জনবল বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘জনবল ঘাটতির কথা বলে আরডিএ নিজেদের দুর্নীতি ও দায়বদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করে থাকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা