শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৮ এএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫০ পিএম
বাক্সবাদাম। প্রবা ফটো
দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বনে বাদাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠে এই বাদাম গাছ। প্রায় গোলাকার বক্স আকৃতির খোলসের ভেতরে থাকে পনেরো থেকে ষোলোটি দানা বা বাদাম। যে কারণে বাক্সবাদাম নামে পরিচিত এই ফল বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। স্বাদের কারণে মুখোরচক খাবার হিসেবে অনেকে তা কিনে খাচ্ছেন। গাছ থেকে সদ্য সংগ্রহ করা বাক্সবাদাম দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
কাঠ বাদাম নামে বিক্রি হলেও এর নাম বাক্সবাদাম বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর বিভাগীয় সামাজিক বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বনে বাদাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছ জন্মায়। এর বিচি খাওয়া যায়। খেলে ক্ষতি নেই, পুষ্টিকর খাদ্য। আগে এই বাক্সবাদাম খাওয়ার প্রচলন তেমন ছিল না। বর্তমানে এটি সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, বাক্সবাদামের ভেতর শক্ত-চ্যাপ্টা গোলাকৃতির সবুজাভ খোলস দেখে মনে হবে বুনোফল। তবে দুই ভাগ করলে খোলসের ভেতরকার শিমুল লাল রঙের মধ্যে গুচ্ছাকারে সাজানো বেশকিছু দানা রয়েছে। এগুলো খেতে সুস্বাদু, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। আকৃতির সঙ্গে মিল রেখে অনেক এলাকায় এটি ‘জংলি কাঠবাদাম’ নামেও পরিচিত। উপরের বাকলটি ফেলার পরও ভেতরে আরেকটি পাতলা বাকল রয়েছে। যার পরের স্তরে মিলবে সফেদ বাদাম। পুরোপুরি পাকলে এর বাইরের রঙ হয় কালো, একটু কম হলে হালকা লাল, আর অপরিপক্ব কাঠবাদামের বাইরের আবরণ অনেকটা সাদা। পরিপক্ব ফলটি মাঝখান দিয়ে আপনাআপনি ফেটে যায়।
শহরের বড়পুলের ওপর ফুটপাথে বিভিন্ন ফলসহ বাক্সবাদাম বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ অনু। তিনি জানান, দিনাজপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই বাদামের অসংখ্য গাছ রয়েছে। তারা এই বাদামকে কাঠবাদাম বলেই চেনেন। কেউ কেউ আবার এটাকে জংলি কাঠবাদামও বলেন। এটার নাম যে বাক্সবাদাম, তা তার জানা ছিল না।
অনু বলেন, বড় পুলের আশপাশেই ১০ থেকে ১২টি গাছ রয়েছে বাক্সবাদামের। দিনাজপুরের মানুষ এই বাক্সবাদাম খাওয়া যেত, তা জানত না। একটা সময় পর্যন্ত এই বাদাম বড় হয়ে পেকে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। গত তিন বছর ধরে আমি ও মিলন ভাই এই বাদাম গাছ থেকে পেড়ে বিক্রি করছি।
পাশে আরেক বাক্সবাদাম বিক্রেতা মিলন জানালেন, ১০ থেকে ১৫ টাকা হিসেবে প্রতি পিস বাদাম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। একটি ফলের ভিতরে থাকে পনেরো থেকে ষোলোটি বাদাম। মুখরোচক বিধায় মানুষ কিনে নিচ্ছে পরিবারের জন্য। ফলটি গাছে আসে সবুজ হয়ে। পরে তা পুরুষ্টু হয়ে কাঠ কালারের হয়। ফলটি শক্ত কিছুতে আঘাত করলে মাঝখানে ফেটে যায়। এতে করে ভিতরে লাল আবরণের মধ্যে কালো রঙের বিচি সেটি ছিললে প্রথমে লাল আবরণ বের হয়, সেটিকে আবার ছিললে বেরিয়ে আসে সাদা রঙের বাদাম। যা খেতে অনেক সুস্বাদু। পাশেই বাক্সবাদাম বিক্রি করছিল শিশু ফিরোজ। সে জানায়, গত দুই দিনে চার বস্তা বাদাম ফল বিক্রি করেছে ৪ হাজার টাকায়। আজও এক বস্তা নিয়ে বিক্রি করছে। তার বাবা গেছেন গাছ থেকে বাদাম পাড়তে।
বাক্সবাদাম কিনতে আসা দিনাজপুর জেলা জজ কোর্টের অফিস সহকারীর মোয়াজ্জেম হোসেন শাহ বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে বড়পুল এলাকা থেকে বাদাম কিনি। পরিবারের সবাই এই বাদাম খেতে পছন্দ করেন।
দক্ষিণ কোতোয়ালির গোদাগাড়ি হাট সংলগ্ন স্থানীয় একটি মসজিদের জায়গায় থাকা বাক্সবাদাম গাছের ফল বিক্রি করে বিগত কয়েক বছরে মসজিদ কমিটি লাখ টাকা আয় করেছে বলে জানান মুসল্লি আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, এবারও এই গাছের ফল বিক্রির ডাক হবে। প্রতি বছর ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা বিক্রি হয় এই গাছের ফল। এই টাকা পায় মসজিদ কমিটি। তা মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। আগে কেউ জানত না এই ফলের দানা খাওয়া যায়। প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ বছর বয়সের এই গাছের ফল আগে এমনিতেই গাছ থেকে পড়ে যেত। এখন কয়েক বছর ধরেই বিক্রি হচ্ছে।
পুলহাট স্টাফ কোয়ার্টারের গেটে পাশের বাক্সবাদাম গাছের মালিক রোস্তম আলী বলেন, আমার বাড়ির পাশের গাছটির বয়স প্রায় সত্তর বছর। আগে জানতাম না যে, এই ফল খাওয়া যায়। গাছটিতে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ হাজার ফল হয়। গত তিন বছর ধরে এই বাদাম বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছি।