কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৮ পিএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫৫ পিএম
মৃত ডলফিনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা। প্রবা ফটো
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে একে একে ভেসে আসছে বিপন্ন প্রজাতির মৃত প্রাণী। মাত্র তিনদিনে উপকূলে দেখা মিলেছে ৩টি মৃত ডলফিন, ১টি মৃত পরপইস ও ১টি কচ্ছপ।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিনের দেখা মিলেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার হিমছড়ি সৈকতে আরও একটি মৃত ইরাবতী ডলফিন ও সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসে। গত বুধবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস।
আজ সকালে সৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিন ২টির নমুনা সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সোনারপাড়া সৈকতের পাওয়া গেছে মৃত ইরাবতি ডলফিন। যা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি। ইনানী সৈকতে মৃত পাওয়া ডলফিনটি ইন্দো প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক ডলফিন। এটি স্বতন্ত্র সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইন্দোপ্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন বাসস্থানের ক্ষতি, জল দূষণ, উপকূলীয় উন্নয়ন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং এর পরিসরের মধ্যে সামুদ্রিক যানবাহনের বৃদ্ধির কারণে হুমকির সম্মুখীন। ধারণা করা হচ্ছে আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং মাছ ধরার যাওয়া ট্রলার-জাহাজ বা জালে দুর্ঘটনাজনিতভাবে আটকা পড়ে আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এটি মারা গেছে।
তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া ডলফিনটি দুই সপ্তাহ আগে শরীরে রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মারা পড়েছে। ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ডলফিনটির ওজন ১০০ কেজি। শুক্রবারের দুই ডলফিনসহ ৩টি ডলফিন উপকূলে ঘোরাঘুরির সময় ডলফিনটি জেলেদের জালের রশিতে আটকে শ্বাস নিতে পারেনি। এতেই ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসে। বোরির বিজ্ঞানীদের ধারণা, ১০ থেকে ১২ দিন আগে কচ্ছপটি মারা গেছে। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি মা কচ্ছপ মারা পড়েছে।
এ বিষয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, অলিভ রিডলি প্রজাতির এই মা কচ্ছপ সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসার সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা অন্যকোনো ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এটির পেটে ১০২টি ডিম পাওয়া গেছে।
জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তিনি বলেন, এর আগে ডলফিন, তিমির মরদেহ ভেসে আসলেও কক্সবাজারে পরপইস উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। এটি ইংরেজিতে ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষে, শব্দ ও জলদূষণে এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণে এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে। এর কারণে এটি মারা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, এটি বোরির স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৃত পরপইস বা শুশুকটি ওজনে মাত্র ৩ দশমিক ৮৮ কেজি। এটি একটি সদ্য প্রসবকৃত বাচ্চা পরপইস হতে পারে।
গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।
এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।