× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বর্জ্যের বিষে নীল জমি, বিপন্ন নদী

রেজাউল করিম, গাজীপুর

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০১ এএম

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৮ পিএম

শিল্পকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যে কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে তুরাগ নদের পানি। প্রবা ফটো

শিল্পকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যে কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে তুরাগ নদের পানি। প্রবা ফটো

গাজীপুরে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ গিলছে কৃষিজমি, বিপন্ন হচ্ছে নদ-নদী ও খাল। এর ফলে সোনা ফলানো মাঠ এখন চাপা পড়ছে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানির নিচে। এতে প্রতিনিয়ত কমছে ফসল উৎপাদন। অপরদিকে তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে জেলার অন্যতম প্রধান নদ তুরাগ ও একাধিক মুক্ত জলাশয়। দেশীয় মাছের ভান্ডারে কারখানা থেকে নেমে আসা এমন বিষে ধস নেমেছে এর উৎপাদনও।

কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-৯ অর্থবছরে পুরো জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২১৫ হেক্টর। বর্তমানে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১৭০ হেক্টরে। অর্থাৎ মাত্র ১৫ বছরে কমেছে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এ ছাড়াও অবশিষ্ট থাকা জমিতেও দূষণের কারণে উৎপাদন কমেছে।

এদিকে মৎস্য অফিস জানায়, এক যুগ আগেও গাজীপুরে মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ছিল ২০ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন। বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫৩ টন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জানান, গাজীপুর মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত শিল্পকারখানার তরল বিষাক্ত পানি পরিশোধন ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বাইরে। সেই দূষিত পানি গিয়ে পড়ছে তুরাগ নদ ও খাল-বিলে। কারখানার বর্জ্য এবং দূষিত পানিতে আশপাশের ফসলি জমি ও ফসল নষ্ট হচ্ছে। একসময় যেখানে বিঘায় ২০-২২ মণ ধান হতো। সেখানে এখন ধান ফলানোই কঠিন। একই অবস্থা সবজি চাষেও। কৃষকরা জানান, বর্তমানে নদী ও বিলের পানি কালো ও দুর্গন্ধ থাকায় কষিকাজে ব্যবহার করা যায় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী, বিসিক, কড্ডা, বাইমাইল, সদর উপজেলার মনিপুর, টঙ্গীর বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তুরাগে। এতে নদের পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। দখল ও দূষণের ফলে সংকীর্ণ হয়েছে নদ, হারিয়েছে প্রবাহের গতি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, তুরাগসহ জেলার একাধিক নদ-নদীতে পাওয়া যেত অসংখ্য দেশি প্রজাতির মাছ। এসব মাছের সঙ্গে জড়িত ছিল হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। এসব নদী ও বিলের পানি রান্নার কাজ ছাড়াও মানুষ কৃষিকাজে, কাপড় ধোয়া, গোসল করাসহ প্রায় সব কাজে ব্যবহার করত। অথচ শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার পরপরই দ্রুত পরিবর্তন হয়ে পড়ে এমন পরিবেশ। বর্তমানে পানি ব্যবহার তো দূরের কথা দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন।

তারা জানান, মহানগরীর কোনাবাড়ী, বাইমাইল, কড্ডা ও বাঘিয়া, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন তুরাগ নদ ও আশপাশের বিল থেকে এ সময়ে মাছ ধরে নিজের পারিবারের খাওয়ার চাহিদা মিটাত। কিন্তু কারখানার তরল বর্জ্যের কারণে মাছ মরে যাচ্ছে। এখন যে মাছ পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়ার অযোগ্য। রান্না করলে কেমিক্যালের দুর্গন্ধ পাওয়া পায়।

গাজীপুর মৎস অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল শাহীন জানান, গাজীপুরে ১ হাজার ৭২০ হেক্টর বিল রয়েছে এবং তুরাগ ও বংশাইসহ ১০টি নদ-নদীর ১ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জলাশয়ে ফি বছর ২ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন দেশি মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু গেল ১৪ বছরে মাছের উৎপাদন কেবলই কমছে। এর জন্য প্রধানতম দায়ী কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য। সুস্বাদু দেশি মাছের উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে হলে প্রশাসনের সব বিভাগের সমন্বয় জরুরি।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা দূষণের কারণে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া জানান, গাজীপুরে দুই হাজারের অধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ ডাইং কারখানায় ইটিপি বা বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে। কিন্তু খাল-বিল ও নদীর দিকে তাকালেই দেখা যায় এসব ইটিপি নিয়ম মেনে চালানো হয় না। পোশাক কারখানা বহাল রেখে নদী ও বিলে বিশুদ্ধ পানি মিলবে না। বিভিন্ন সময়ে তাদের অভিযান চালানো হয়। এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অনেক কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। অনেকের গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া জরিমানাও করা হয়েছে। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা