প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৮ এএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৭ পিএম
জমে উঠেছে গদখালী ফুলের বাজার
ফাগুনের রঙ ছড়িয়ে ফুটেছে লাল টুকটুকে গোলাপ। আরও আছে গাঁদা, জারবেরা, সূর্যমুখীর মতো রঙিন হাসি ছড়ানো নানা রকম ফুল। আগামীকাল বসন্তের প্রথম দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এসব ফুল বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছেন চাষিরা। বিভিন্ন দিবস ঘিরে দেশে ফুলের বাজারও বড় হচ্ছে দিন দিন। শুধু যশোরের গদখালীর চাষিরাই এবার ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন। তাছাড়া ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ফুলচাষিরাও অবদান রাখছেন ফুলের অর্থনীতিতে।
দিবসটি ঘিরে ইতোমধ্যে ফুলের দাম বেড়েছে। গদখালী বাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ২০ টাকায়, যা সপ্তাহ খানেক আগে ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতিটি রজনীগন্ধা ১০-১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২ থেকে ১৬, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ফুল বেচতে এসেছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফারুক হোসেন। তিনি জানান, ৩০০ গোলাপ বিক্রির জন্য এনেছিলেন। সেগুলো তিনি প্রতিটি সাড়ে ১৯ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। এ বছর পচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’
সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয় বলে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবু অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের ছোট কালিয়াকৈর, বাঘ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাবর, সামাইর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইন, বনগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠজুড়ে গোলাপ বাগানে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা রঙের গোলাপ। বাতাসে দুলছে যেন ছন্দের তালে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে চাষিরা জানান।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ফুলের গ্রামখ্যাত সাবদীসহ এর আশপাশের গ্রামগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিকাল হলে ফুলের দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ফুলপ্রেমীরা ছুটে আসেন। সায়েমা আক্তার নামে এক তরুণী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফুল হলো আস্থার প্রতীক। ফুল হলো বন্ধুত্বের প্রতীক। ফুল ভালোবাসি বলে এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সাবদী গ্রামে আসি মাঝে মাঝে।’
এ বছর ফুলে ছত্রাক আক্রমণ করায় চাষিদের মন খারাপ। অনেক কৃষক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। গাছের পাতা, ডাল ও কুঁড়ি পচে ঝরে যাচ্ছে অনেক বাগানে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সমাধান। অনেক গাছের শাখা-প্রশাখা লালচে ও কালো হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়ে গেছে। কলি এলেও ফুল না ফুটেই ঝরে যাচ্ছে।
সাভারের শ্যামপুর গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ফুলও তিনি তুলতে পারেননি। ফুল ফোটার আগেই কুঁড়ি পচে যাচ্ছে, যা ফুটেছিল তা-ও রোগাক্রান্ত। ফলে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। প্রথমে গাছের পাতায় কিছু কালো দাগ আসে। এরপর ধীরে ধীরে পাতা পড়ে কাণ্ডে পচন ধরে। তারপর ফুল ফোটার আগেই কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অতিবৃষ্টি আর কুয়াশার কারণে এই রোগ ধরেছে বলে তিনি মনে করেন।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বেনাপোল, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার প্রতিবেদক)