× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যশোরে তিন দিনে ৪ খুন, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

যশোর ও অভয়নগর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১১ পিএম

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০১ এএম

যশোরে তিন দিনে ৪ খুন, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

যশোরের অভয়নগরে গত রবিবার রাতে বিএম মুরাদ হোসেন নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নওয়াপাড়া গ্রামের মো. সাহাবুল ইসলাম সাবুরের ছেলে মুরাদ হোসেন নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এক সময়ের অভয়নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বেঁচা অধিকারীর সহযোগী ছিলেন। মুরাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন রবিবার রাতে কাজ শেষে নওয়াপাড়া স্টেশনবাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় তার বাড়ির কাছে পৌঁছলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দুই হাতের কবজি, ডান পা ও পেটে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। এ সময় তার চিৎকারে এলাকাবাসী এসে তাকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুধু যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেন নয়, গত তিন দিনে যশোরে আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। আর বাকি তিনটি হত্যাকাণ্ডই হয়েছে যশোর সদর উপজেলায়। তবে কোনোভাবেই অপরাধীদের লাগাম টানতে পারছে না যশোরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ মাত্র একজনকে আটক করতে পেরেছে। এমনকি এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়েও তেমন কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। ফলে এসব খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা মান্দিয়া বাওড়কান্দা আদর্শপাড়া জামে মসজিদের কাছে একটি পুকুরের পাড় থেকে মহাসিন নামে এক যুবকের আগুন দিয়ে পোড়ানো বীভৎস মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোর কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। মহাসিন যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া তোলানুরপুর গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ জানায়, নিহত মহাসিন একজন কৃষক। পাশাপাশি তিনি সুদের ব্যবসা করতেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে খুন করা হয় বলে দাবি পুলিশের। তবে এ ঘটনায় আটক-গ্রেপ্তারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে জুম্মন নামে একাধিক মামলার এক আসামিকে হত্যা করে। জুম্মন যশোর শংকরপুর জমাদ্দারপাড়া এলাকার মৃত মুরাদ সরদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ ছয়টির বেশি মামলা ছিল বলে জানায় পুলিশ। স্থানীয়রা জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জুম্মন খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

জুম্মনকে হত্যার সময় প্ল্যাটফর্মে ৫০ গজ দূরে জিআরপি পুলিশ থাকলেও তাকে কেউ বাঁচাতে আসেনি। এ ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, অন্তঃকলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে যশোর সদর উপজেলার রাজারহাট রামনগরের সুতিঘাটা এলাকায় চুরির অভিযোগ তুলে ফয়েজুল গাজী নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় কয়েক যুবক। নিহত ফয়েজুল যশোর সদর উপজেলার গোলদারপাড়া সুতিঘাটা গ্রামের জালাল উদ্দিন গাজীর ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন। তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যশোরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও অপরাধের বিষয়ে পুলিশ রয়েছে অন্ধকারে। যশোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই ক্লুলেস। সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ই পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর অনুসন্ধান চলছে, এরপর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে অভয়নগরে যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নওয়াপাড়া রেলস্টেশন চত্বরে প্রতিবাদ সভা করেছে নওয়াপাড়া পৌর যুবলীগ। সভায় সভাপতিত্ব করেন নওয়াপাড়া পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. বিল্লাল আহমেদ বাবু। বক্তব্য দেন যুবলীগ নেতা ইউসুব বিশ্বাস, রেজাউল ইসলাম, হৃদয় খান, বায়োজীদ বিশ্বাস, সোহাগ হোসেন, শেখ সোহেল ও ছাত্রলীগ নেতা কাজী আহাদুর রহমান মামুন। তারা মুরাদ হোসেনের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নওয়াপাড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে।

অভয়নগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর মো. তালিম হোসেন বলেন, মুরাদ হোসেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। যারা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দাবি করছি। 

৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুস সালাম শেখ বলেন, রবিবার রাতে কে বা কারা আমার অফিস ভাঙচুর করেছে, তা আমি জানি না।

মুরাদ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে স্বজনেদের আহাজারি করতে দেখা যায়। তারাও এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়ার দাবি জানায়। মুরাদ হোসেনের স্ত্রী ঋতু বেগম বলেন, আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

মুরাদ হোসেনের বাবা মো. সাহাবুল ইসলাম সাবু বলেন, আমার ছেলে নওয়াপাড়া বাজার থেকে সরদারপাড়া হয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথে কবরস্থানের কাছে গেলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুরাদের হাতের কবজি, পা ও পেটে কুপিয়ে জখম করে। পরে এলাকাবাসী তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে খুলনায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। ক্লিনিকে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কঠিন সাজা দাবি করছি। 

হত্যাকাণ্ডের পর এক দিন পার হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এ বিষয়ে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, মুরাদ হোসেন নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তিনি মারা যান। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছি। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এখনও কোনো মামলা হয়নি। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।

যশোর রেলস্টেশনে জুম্মনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর জানা গেছে, শহরজুড়ে যেসব উঠতি বয়সি অপরাধী রয়েছে, তাদের অধিকাংশের আশ্রয়স্থল যশোর রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে। দিনে ও রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গা অপরাধ সংঘটিত করে এসব অপরাধীরা রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে নির্বিঘ্নে আশ্রয় নেয়। তবে অজ্ঞাত কারণে জিআরপি ফাঁড়িকে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ। 

এ বিষয়ে যশোর জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের শুধু প্ল্যাটফর্মের ওপর নিরাপত্তার দায়িত্ব। প্ল্যাটফর্মের আশপাশে কী হলো, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তার জন্য এখানকার স্থানীয় থানা-পুলিশ রয়েছে।

শুধু যশোর রেলস্টেশন নয়, পৌর পার্ক, শংকরপুর বাস টার্মিনাল ও মনিহার এলাকায় অহরহই ঘটে ছুরিকাঘাতের ঘটনা। এমনকি এসব উঠতি বয়সি সন্ত্রাসীর হাত থেকে বাদ যায় না খোদ পুলিশ সদস্যরাও।

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা অপরাধ করছে, পুলিশ তাদের আইনি ব্যবস্থায় নিয়ে আসছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনায় পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণহীন বলা যাবে না।

জুম্মন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ কোনো তথ্য দিতে না পারলেও যশোর র‌্যাব-৬ গতকাল ভোরে যশোর ও নড়াইলে অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করেছে। তারা হলেন- যশোর টিভি ক্লিনিক মোড় এলাকার শুভ, বেজপাড়া বিহারীপট্টি এলাকার সবুজ ও পুলের হাট কৃষ্ণবাটি এলাকার মোহাম্মদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর র‌্যাব-৬ কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফয়সাল তানভীর।

যশোরে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বেলাল হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আধিপত্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে ঘটেছে। তা ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কি-না, সে বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অধিকতর তদন্ত চালানো হচ্ছে। এরপরই বিস্তারিত জানা যাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা