লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৫ এএম
লক্ষ্মীপুরের খোয়াসাগর দিঘী পার্কে লাগানো হয়েছে ‘ডিসি পার্ক’ সাইনবোর্ড। প্রবা ফটো
লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বিজড়িত খোয়াসাগর দিঘী পার্কের নামের পরিবর্তে ‘ডিসি পার্ক’ সাইনবোর্ড লাগানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলসহ স্থানীয় বাসিন্দারা কোনভাবেই ডিসি পার্ক নামটি সমর্থন করছেন না। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের নেটিজেনরা সামাজিক মাধ্যমে ডিসি পার্ক লেখা সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমালোচনামূলক মন্তব্য করছেন।
লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাতা থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত খোয়াসাগর দিঘীটি। এর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে কুয়াশাছন্ন দেখা যায়। তাই এ দিঘীকে খোয়া বা কুয়াশাময় দিঘী বলা হয়। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের পুরনো বিশাল আয়তনের দিঘীটি খোয়াসাগর দিঘী নামেই দেশব্যাপী পরিচিত। আনুমানিক ১৭৫৫ সালের দিকে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দিঘীটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দিঘীটির সংস্কার করেন। প্রাচীন এই দিঘীকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। দীর্ঘ সময় দিঘীটি অযত্নে পড়ে ছিল। তবে সেটি সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। দিঘীর দুইপাড়ে শোভাবর্ধন করা হয়। দিঘীর পানিতে চাষ করা হয় মাছ। সবকিছু তদারকি করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে।
এদিকে সৌন্দর্য বর্ধনের পর জেলা শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় দিঘীটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসে। তবে দিঘীর নাম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না জেলার বাসিন্দারা। ঐতিহাসিক নামেই দিঘীটিকে পরিচিত করতে চান তারা।
এদিকে ডিসি পার্ক নামকরণ নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহানকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই। কে বা কারা ডিসি পার্কের বোর্ড ঝুলিয়েছে তাও জানি না। আজই জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
জেলা সু-শাসনের জন্য নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের নামকরণ সমিচীন নয়। খোয়াসাগর দিঘীর নামকরণ ঠিকই ছিল।
খোয়াসাগর দিঘী নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ পোষ্ট করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, ‘লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম স্বারক দালাল বাজার খোয়া সাগর দিঘী। এ ইতিহাস ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখে গড়ে উঠুক সকল নতুন স্থাপনা। নামকরণ থাকুক খোয়া সাগর দিঘীর নামে। এটা আমাদের লক্ষ্মীপুর বাসীর দাবি।’
ঘটনাটি নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব হোসেনও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার চাই। ডিসির নামের কাজ কি এখানে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তিনি কেন করবেন ?’
মহিবুল বাশার সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, ‘শতবছর ধরে চলে আসা খোয়াসাগর দিঘী নামটা এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেল! দুঃখজনক।’
এস এম মাইন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ করে লিখেছেন, 'খোয়াসাগর দিঘী এক নামে সারা বাংলাদেশ চেনে। এটার নাম পরিবর্তন করা মোটেও ভালো কাজ নয়।’
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইতিহাস বিজড়িত স্থানটির নাম পরিবর্তনের এই অপ-প্রয়াস কেন? কার স্বার্থে? লক্ষ্মীপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান দালালবাজার খোয়াসাগর দিঘী। যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য।’
খোয়াসাগর দিঘী পার্কের তদারকিতে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মো. ইউছুফ বলেন, ‘সাইনবোর্ডটি প্রায় ১৫ মাস আগে সদর উপজেলার সাবেক ইউএনও ইমরান হোসেন লাগিয়েছেন।’ যদিও ২০২৩ সালের ১ জুলাই উদ্বোধন করা সম্প্রসারণ কাজের নামফলকে লেখা আছে ‘খোয়া সাগর দিঘী পার্ক’।