× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুষ্টিয়ায় শেষ হলো তিন দিনব্যাপী লাঠি খেলা উৎসব

কুষ্টিয়া প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪১ পিএম

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:২৪ পিএম

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে লাঠিয়ালদের ক্রীড়া নৈপুণ্যে বুঁদ নানা বয়সি হাজারো দর্শক। প্রবা ফটো

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে লাঠিয়ালদের ক্রীড়া নৈপুণ্যে বুঁদ নানা বয়সি হাজারো দর্শক। প্রবা ফটো

আঘাত- পাল্টা আঘাত। প্রতিপক্ষের লাঠির আক্রমণ কখনও নিজের লাঠি দিয়ে, আবার কখনও বেতের তৈরি ঢাল দিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছেন চৌকস লাঠিয়ালরা। সঙ্গে ঢোল আর কাঁসরের তালে তালে নান্দনিক নৃত্য। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে লাঠিয়ালদের এমন ক্রীড়া নৈপুণ্যে বুঁদ নানা বয়সী দর্শক।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে তিন দিনের এ লাঠি খেলা উৎসব। এ উৎসবে লাঠিয়ালদের নৈপুণ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড়় করেন কলেজ মাঠে।

এক সময় জমিদাররা লাঠিয়াল পুষতেন তাদের সুরক্ষার জন্য। সেখান থেকেই উদ্ভব হয় লাঠি খেলার। এক সময় গ্রাম বাংলার অন্যতম আনন্দ-উৎসব ছিল এই লাঠি খেলা। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে এ খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লাঠিয়ালদের সংগঠন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী কুষ্টিয়ায় আয়োজন করে তিন দিনের লাঠি খেলা উৎসব। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সের প্রায় ৬০০ লাঠিয়াল যোগদেন এই উৎসবে। শুধু পুরুষ নয়, নারী লাঠিয়ালরাও যোগ দেন এই উৎসবে। তাদের ক্রীড়া নৈপুন্যে মুগ্ধ নানা বয়সি দর্শক। 

নারী লাঠিয়ালরা বলেন, এই খেলার মাধ্যমে নারীরা আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করতে পারে ভালোভাবে। এসব লাঠিয়াল দলে ৭ বছর বয়সের শিশুরাও যেমন ছিল, তেমনি শারীরিক কসরত আর ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে আগত দর্শকদের নজর কাড়েন ষাট- সত্তর ঊর্ধ্ব লাঠিয়ালরাও।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে কুষ্টিয়া কলেজ মাঠের লাঠি খেলা দেখতে এসেছিলেন ৭৩ বছর বয়সি রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘এক সময় আউশ ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে লাঠি খেলায় মেতে উঠতেন গ্রামের মানুষ। বাড়ির উঠোন কিংবা ধানের খোলায় আসর বসত এই লাঠি খেলার। আগে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি লাঠিয়াল দল ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খেলাটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। অনেকদিন বাদে কুষ্টিয়ায় তিনদিনের লাঠি খেলা উৎসবের খবর শুনে তাই তিনি ছুটে এসেছি। এই লাঠি খেলা দেখে আমার কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখের সামনে।’ 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া হাইস্কুলের ছাত্র আসলাম হোসেন বলেন, ‘লাঠি খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। তার মত বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। আমার মতে, বিদেশি মার্শাল আর্ট না শিখে, লাঠিখেলা চর্চা করলে আত্মরক্ষায় ভালো কাজ দিতে পারে।’

উৎসবে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের অন্যতম নারী লাঠিয়াল কুষ্টিয়ার মেয়ে মঞ্জুরীন সাবরিন রূপন্তী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে নানা রকমের খেলা আছে। তবে লাঠি খেলা তার থেকে আলাদা। এই খেলায় যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, দর্শক মাতানো যায়, আবার একইসঙ্গে আত্মরক্ষার কৌশল শেখা যায়। 

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সমাজে নারীরা পদে পদে নিগৃহীত নির্যাতিত হয়। বিশেষ করে ঘরের বাইরে তারা অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ নন। তাই নারীরা লাঠি খেলা রপ্ত করতে পারলে সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।’

লাঠি খেলোয়াড়দের সংগঠিত করতে কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ওস্তাদ ভাই ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন। চলতি বছর এই সংগঠনের ৯০ বছর পূর্ণ হল। মূলত এই উপলক্ষেই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে তিনদিনের লাঠি খেলা উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

ওস্তাদ ভাইয়ের নাতনি এবং উৎসবের অন্যতম আয়োজক শাহিনা সুলতানা দিজু বলেন, ‘বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী লাঠি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণসহ এই খেলা টিকিয়ে রাখতে নানাভাবে কাজ করে চলেছে। তারই অংশ হিসাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনদিনের লাঠি খেলা উৎসব আয়োজন করা হয়। বহু বছরের পুরনো এই গ্রামীণ ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই আমাদের এই আয়োজন।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা