গোপালগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৯ পিএম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:২৪ পিএম
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত রূপালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত। প্রবা ফটো
গোপালগঞ্জে রূপালী ব্যাংক (প্রধান শাখা) থেকে ১৬ জন গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত কৌশিক ভক্তকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে আমানত খোয়া যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
গোপালগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত ফেক লেনদেন করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
‘এই জিডিটি এখন গোপালগঞ্জ দুর্নীতি দমন অফিসে তদন্তাধীন রয়েছে। পাশাপাশি রূপালী ব্যাংকের হেড অফিস থেকে দুদফা তদন্ত সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে তৃতীয় দফায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে কী পরিমাণ টাকার লেনদেন করেছে এ বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।’
তিনি জানান, ওই ১৬ জন গ্রাহককে তাদের পাওনা টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে কৌশিক ৬০ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়েছেন। কিছুটা দেরি হলেও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জ সদরের গোলাবাড়িয়া গ্রামের শীলা রানী বিশ্বাস ওই ব্যাংকের একজন গ্রাহক। ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন তিনি। এই হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিভিন্ন সময়ে ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৭ টাকা পাঠান তার স্বামী সঞ্জয় বিশ্বাস। অভিযোগ উঠেছে, সেখান থেকে কৌশলে প্রায় ১১ লাখ টাকা তুলে নেন কৌশিক। এভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি আরও ১৫ জন গ্রাহকের আমনত নয়-ছয় করেন।
শীলা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক প্রতারণা করে উত্তোলন করে নিয়েছে। এ ছাড়া আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন করেছে, যা আমি জানতাম না। গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন অফিস আমাকে ডাকার পর বিষয়টি জানতে পারি।
টুঙ্গিপাড়ার বাশুড়িয়া গ্রামের কৃষ্ণ পান্ডে বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। পরে আমার শ্যালক নয়ন বিশ্বাসের আত্মীয় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিকের কাছে যাই। তার কথামতো ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলি। অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা তুলতে গেলে কৌশিক কৌশলে চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে অন্যত্রে বসিয়ে রেখে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে নেয়। পরে আমাকে ১৯ হাজার টাকা দেয়।
ব্যাংক কর্মকর্তা মুক্তি খাতুন বলেন, আমি নতুন যোগদান করে ক্যাশের দায়িত্ব পালন করি। সিনিয়র অফিসার কৌশিক ভক্ত কাজ শেখানোর কথা বলে আমার আইডিটি কৌশলে নিয়ে নেন। তিনি প্রতারণা করে আমার আইডি দিয়ে ব্যাংকে বিভিন্ন ফেক লেনদেন করেন, যা আমি জানতাম না। দুর্নীতির তদন্তের সময় আমার আইডি ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে।
এ বিষয়ে কৌশিক ভক্ত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতারণায় আমি একা জড়িত নই। এটা অফিসের ভেতরের ব্যাপার। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। আমি এর থেকে কিছু বেশি বলতে পারব না।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা কৌশিক ভক্তের বিরুদ্ধে টাকা লুটপাটের অভিযোগ এনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান কিছু দিন আগে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর জিডির কপি পাঠানো হয়। দুদক বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সিফাত উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। শুরুতে গ্রাহকদের বক্তব্য পর্যায়ক্রমে নেওয়া হচ্ছে।