শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৩ এএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৬ পিএম
বাগেরহাটের শরণখোলার গাবতলায় বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে তোলা। প্রবা ফটো
শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার আবারও বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নতুন করে প্রায় ৫০০ ফুট (১৫০ মিটার) মূল বেড়িবাঁধের নিচের গাইড ওয়াল বলেশ্বর নদে বিলীন হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে ধসে নদীতে নেমে যেতে শুরু করেছে বাঁধের ওপরের অংশের সিসি ব্লক।
এর আগে গত বছরের ১৭ ও ১৮ অক্টোবর একই এলাকায় আশার আলো মসজিদ থেকে ডিএস-৭ স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ৫০ মিটার গাইড ওয়ালসহ বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
ভাঙনকবলিত ওই অংশে বাঁধ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠার উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে (ইমার্জেন্সি প্রটেকশন) জিওব্যাগে বালু ভরে তা ডাম্পিং করা হয়। কিন্তু ওই জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ে ভাঙন সাময়িক রোধ করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে সেখানে আবারও ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা সিয়াম মাহমুদ জানান, নতুন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় বগী ও গাবতলার মানুষের মাঝে সেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাঁধের নিচ থেকে গাইড ওয়াল আগেই বিলীন হয়েছে। এখন দুদিন ধরে ওপরের ব্লক নামতে শুরু করেছে। ভাঙনে বাঁধের গোড়ায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট গভীর খাদ সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নদী শাসন করা না হলে মূল বাঁধই বিলীন হয়ে যাবে।
তাফালবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম আকন বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা ব্লক ফেলে নদী শাসনের দাবি করে আসছি, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তা না করে কিছু কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলছে। এতে ঠিকাদার লাভবান হচ্ছেন কিন্তু বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
৬নং দক্ষিণ সাউথখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, সিডরের সময় এই বাঁধ ভেঙে বহু মানুষ মারা গেছে। তাই দুর্যোগপূর্ণ আমাদের এই এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কারণে মানুষ সবসময় আতঙ্কিত থাকে।
তাফালবাড়ি রায়েন্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা নদী শাসনের দাবিতে এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধের ওপর মানববন্ধন করেছি। কারণ নদী শাসন না করলে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত এই বেড়িবাঁধ থাকবে না। আর বেড়িবাঁধ না থাকলে সাউথখালীবাসী এখানে বসবাস করতে পারবে না।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, আমরা কৃষক সমিতির পক্ষ থেকে নদী শাসন করে বাঁধ সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসীকে নিয়ে মানববন্ধন ও পথসভা করি। এখন আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ ভিটেছাড়া হয়ে পড়বে।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, বাঁধ নির্মাণের আগে আমরা বারবার বলেছি নদীন শাসন করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাঁধ হস্তান্তর করে সিইআইপি কর্তৃপক্ষ চলে গেছে। অথচ এখন ভাঙনের ভয় নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মুহাম্মদ আল বিরুনী জানান, নতুন করে ভাঙনের বিষয়টি তার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ভাঙন প্রটেকশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।