বাঁশখালী যুবলীগ
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১১ পিএম
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২৪ পিএম
বাঁশখালী উপজেলার মানচিত্র। সংগৃহীত
দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর নেতৃত্বশূন্য বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি ৩১ সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটিতে ৯টি ভুয়া পদপদবি দেখিয়ে কোটি টাকার ‘বাণিজ্য’ হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন পদবঞ্চিত একাধিক নেতা। জায়গা দখল, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত অনেকেই কমিটিতে আসায় এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে এই কমিটি ঘোষণা করার পর হামিদ হোসাইন নামে যুবলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন টাকার কমিটি, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ।’
ফাহিমুল ইসলাম ইরফান নামে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগ কর্তৃক ঘোষিত সদ্য বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির ১৫ নং সদস্য হয়েছেন মিশুক কান্তি দে মিশু নামের এক যুবক। তার রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগ। উক্ত নামে সিটি কলেজের ইতিহাসে কোনো যুগ্ম-সাধারণ সম্পদক ছিল না। এমনকি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাথে কথিত এই যুবক কোনো সময়ই জড়িত ছিল না। উল্লেখিত পদ-পদবি সম্পূর্ণ ভুয়া। সে একজন অনুপ্রবেশকারী।’
এই কমিটির অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল মোস্তফা সিকদার সংগ্রামকে। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে চারজনকে। তারা হলেন, মো. শাহাদাত রশিদ চৌধুরী, জসীম উদ্দিন চৌধুরী খোকন, আরিফ মাঈনুদ্দিন ও মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরী।
বাকি ২৬ সদস্য হলেন আতাউর রহমান কাদের চৌধুরী, মো. শাহাদাৎ হোসেন, খোরশেদ আলম পাশা, আবদুল ওদুদ লেদু, জাহেদুল আলম মিজান, জামাল উদ্দীন, মনসুর আলম, আবদুল জব্বার, মুজিবুল আলম মুজিব, মিশুক কান্তি দে, বেলাল সিকদার, মাহমুদুল ইসলাম বদি, ওসমান গণি, মুহাম্মদ এরশাদ, বখতেয়ার হোছাইন, আইনুল ইসলাম ইফতেখার, গিয়াস উদ্দিন, আজমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সাদ্দাম হোসাইন, মহসিন সিরাজ, মোহাম্মদ রায়হানুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন বাবর, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, সনেট দাশ ও মো. নোমান। কমিটিতে দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামিরাও রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এক যুবলীগ নেতা বলেন, ‘তিন মাসের জন্য ঘোষিত বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক হওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক হতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ পেতে এসব টাকা দেওয়া হয়েছে। যারা কোনো দিন যুবলীগের রাজনীতি করেনি; দখলবাজ ও চাঁদবাজিতে সম্পৃক্ত। তারা টাকার বিনিময়ে যুবলীগের পদ কিনে নিয়েছে। এমনকি পদ পেতে যেসব পদপদবি দেখানো হয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগই ভুয়া। টাকার কাছে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হেরে গেল। এসব পদপদবি সঠিক কি না, তা যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। এসব মেনে নেওয়া যায় না।’
ভুয়া পদ ব্যবহার ও জমি দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত রশিদ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘১৯৯২ সালে আমি উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলাম। সেই কমিটির সভাপতি শওকত আনোয়ার খান আছেন। উনার কাছে জানতে পারেন। সঠিক পদই আমি দিয়েছি। তা ছাড়া জমি দখলের যেই বিষয়টি বলা হচ্ছে, এসব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ একইভাবে অন্যরাও তাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল তাজুল ইসলামকে সভাপতি এবং মো. মাকছুদ মাসুদকে সাধারণ সম্পাদক করে বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও সেটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মারা গেলে সে পদটি শূন্য হয়। আর সাধারণ সম্পাদক মো. মাকছুদ মাসুদ ব্যবসায়িক কাজে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন উপজেলাকে সংগঠিত ও গতিশীল করতে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছিল। তখন বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৪৫ জন তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন।