সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৭ এএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৮ এএম
শিক্ষকের মৃতদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে তার স্বজনরা। প্রবা ফটো
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে এক শিক্ষকের মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার স্বজনরা। পরে তিন দিনের মধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ওই টাকা তিন দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এ আশ্বাসের পর স্বজনরা মৃতদেহ দাফন করেছেন। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাজিপুর উপজেলার গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত রোকেয়া বেগম উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামের খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তিনি জিসিজি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
রোকেয়ার ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৮ সালে গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে রোকেয়া বেগম ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির কথা বলে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু তার কাছ থেকে দফায় দফায় প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি রোকেয়া বোর্ডে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার এমপিওভুক্তি হয়নি। তিনি বোর্ডে গিয়ে আরও দেখেন তাকে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোর্ড থেকে ফিরে এসে রোকেয়া সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চান। টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় রোকেয়া দুশ্চিন্তায় পড়েন। ৩০ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে তিনি স্ট্রোক করেন। তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ এলাকায় আনা হলে স্বজনরা মৃতদেহ নিয়ে স্কুলমাঠে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’
রোকেয়া বেগমের স্বামী আবদুল করিম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় ৪ লাখ টাকার নিয়েছেন। কিন্তু বেতন করে দেননি। এ শোকে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেলেন।’
কাজিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মজিদ বলেন, ‘মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় মৃত শিক্ষকের নিয়োগ বৈধ হয়নি। তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর উঠাই। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় টাকাও নিয়েছি। আমরা রোকেয়ার ৪ লাখ টাকা ফেরত দেব ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং মীমাংসা হয়ে গেছে। স্বজনরা মৃতদেহ নিয়ে গেছেন।’
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকের মৃতদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে যাই। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলি। তারাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন আগামী তিন দিনের মধ্যে ৪ লাখ টাকা ফেরত দেবেন।’