আবু সালেহ মো. রায়হান, পঞ্চগড়
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০১ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৭ পিএম
উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলা পঞ্চগড়। জেলায় চায়ের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে নতুন স্বপ্ন জাগাচ্ছে কফি চাষ। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক বাগান। দুই বছর আগে সুপারি বাগানে সাথি ফসল হিসেবে রোপণ করা কফির চারাগুলোতে এসেছে ফল। অল্প দিনের মধ্যেই শুরু হবে এ ফল সংগ্রহের কাজ। সহজেই ছায়াযুক্ত স্থানে স্বল্প খরচে কফি চাষ করে কয়েকগুণ লাভের আশা করছে চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কফি থেকে বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারা। তবে বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে কৃষকরা। মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষকের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের শেষের দিকে কৃষি বিভাগের কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় সুপারিসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান। চাষিদের কফি বীজ, কারিগরি সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলার বিশমনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল হালিম প্রধান নামে এক কৃষক তার বাগানে কফি গাছের পরিচর্যা করছেন। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কফি। আব্দুল হালিম বলেন, ‘এক দিন কৃষি বিভাগের লোকজন এসে বলেন সুপারি বাগানে কফি চাষের কথা। পরে তারা ৩৩ শতক জমির জন্য ১৩৫টি কফির চারা দেন। তাদের পরামর্শে চারাগুলোর যত্ন শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল এসেছে। অনেক গাছে ফুল ফুটেছে। কিছু গাছে ফল পাকতে শুরু করেছে। কিছু ফল গাছ থেকে তুলেছি, নিজে কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর বাকিগুলো কয়েক দিনের মধ্যে তুলব। যদি বাজার ভালো পাই তাহলে লাভের মুখ দেখতে পারব।’
কৃষক হালিমের মতো জেলার ৪৭ কৃষক ৯১ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে ৭৪টি কফি বাগান করেছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের পর ফল আসা শুরু হয়। গাছগুলোতে। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। কম খরচে অধিক লাভজনক আর বাড়তি কোনো জমির প্রয়োজন না হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছে কফি চাষে। তবে বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে কৃষকরা।
একই এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হালিম ভাইয়ের বাগানে থোকায় থোকায় কফি ঝুলছে। দেখতে খুব ভালো লাগছে। আমিও কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু চারা নেব বাগান করার জন্য।’
সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। বাড়তি জমি ও তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।’ শুধু আগাছা ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়েও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’ পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে প্রত্যাশা এই কৃষি কর্মকর্তার।
আব্দুল হালিম প্রধান নামে এক কৃষক তার বাগানে কফি গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সম্প্রতি সদর উপজেলার বিশমনি এলাকায়। প্রবা ফটো